পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

অয়না

 এক শিমু বেশি সুন্দর নাকি শিমুল ফুল? অদ্ভুত একটা প্রশ্ন নিয়ে খেলছে নিয়ন। ছোটদের খেলাগুলো বোধয় এরকম অদ্ভুতই হয়। উত্তর খুঁজতে হাত বাড়িয়ে একটা শিমুল ফুল ধরতে চাইলো। হাতে আলতো স্পর্শ লেগে ফুলটি নদীতে পড়ে গেলো। এই নিয়ে চারবার এমন হলো। পেছন থেকে আবার ডাকলো শিমু; ‛নিয়ন আয় না, চল বাড়ি যাই?’ নিয়ন পেছন ফিরে মাথা জাঁকালো। প্রায় আধঘন্টা যাবৎ এভাবেই শিমুর কথায় নিঃশব্দে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। শিমু তবুও একা বাড়ি যাচ্ছে না। এক হাতে জামা উঁচু করে ধরে অন্য হাতে জুতোজোড়া নিয়ে হাঁটু জল পেরিয়ে সামনে এগুতে এগুতে বললো, ‛মা আমাকেও বকবে রে। বলে আসি নি।’ নিয়ন আবার পেছনে ফিরলো। জোয়ারের পানিতে বøকগুলো তলিয়ে গেছে। গভীরতা পরিমাপ করা কষ্টকর। শিমুকে আসতে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো, ‛আর আসিসনে শিমু। পানি বেশি। তলিয়ে যাবি।’ বলতে বলতে পাশ দিয়ে যাওয়া বড় এক লঞ্চের ঢেউ আছড়ে পড়লো শিমুল তলায়। শিমু মুহূর্তেই বøকের মধ্যে পড়ে গিয়ে পানিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। নিয়ন দৌড় মারলো। তাতে বেশ লাভ হলো না। দুজনেরই তলিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো। পানি খুব বেশি না। কোমর অব্দি হবে। কিন্তু একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়ায় দুজনের কেউই উঠে দাঁড়াতে পারলো না। কোনোমতে ন...

শিমুল ফুল ১

নিয়ন তাকিয়ে থাকে শিমুর চলে যাওয়াতে। হটাৎ কি ভেবে দু'হাত প্রসারিত করলো আকাশের পানে। লঞ্চে যাতায়াত করা দূরের যাত্রীরা তাকিয়ে থাকে নিয়নের দিকে। কাকতাড়ুয়া সেজে কে দাঁড়িয়ে আছে নন্দিত এই গ্রামের পথে? লোকে ভাবে; এ হয়তো কোনো খেলা, আট বছর বয়সী এই বালকের জীবনে। আসলে তা না। বিকেলের নরম হয়ে যাওয়া রোদ নিয়নের গায়ে পড়ছে। নিয়ন দু’হাত প্রসারিত করে রেখেছে গায়ের জামা শুকাতে। বিকেলের রোদ ফুরোতেই শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অভিমান মুছে অর্ধভেজা জামাতে নিয়ন হেঁটে চলে বাড়ির পথে। এইতো, জীবন কতো সুন্দর; পেরিয়ে যাচ্ছে বয়ে চলা সংগ্রামের বাঁকে বাঁকে! বাড়ির পেছনের ঝোপ জঙ্গল পেরিয়ে রুপাদের বাড়িতে গিয়ে উঠলো নিয়ন। সামনে দিয়ে আসলে কাকি দেখে ফেলতো এই ভয়ে পেছনের পুকুর ঘাট পেরিয়ে আসা। কিন্তু এসে দেখলো রুপাদের উঠোন ফাঁকা। অন্যদিন চড়ুইপাতি খেলা থাকলে অনেকে থাকে উঠোনে। বাইরে মাটি দিয়ে বানানো আগলা চুলোয় রান্না হয়। শিমুও নেই। নিয়নের মন খারাপ হলো। ঘরের জানালা দিয়ে রুপাকে ডাক দিলো। রুপা আসতেই নিয়ন সামনে গিয়ে জানালার দিকে ঝুঁকে বললো, ‛শিমু তোদের বাড়ি আসে নি রে রুপা? রুপা মন খারাপ করে বললো, ‛আসলো আর তোর কাকি এসে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে গে...

শিমুল ফুল

শিমু বেশি সুন্দর নাকি শিমুল ফুল? অদ্ভুত একটা প্রশ্ন নিয়ে খেলছে নিয়ন। ছোটদের খেলাগুলো বোধয় এরকম অদ্ভুতই হয়। উত্তর খুঁজতে হাত বাড়িয়ে একটা শিমুল ফুল ধরতে চাইলো। হাতে আলতো স্পর্শ লেগে ফুলটি নদীতে পড়ে গেলো। এই নিয়ে চারবার এমন হলো। পেছন থেকে আবার ডাকলো শিমু; ‛নিয়ন আয় না, চল বাড়ি যাই?’ নিয়ন পেছন ফিরে মাথা জাঁকালো। প্রায় আধঘন্টা যাবৎ এভাবেই শিমুর কথায় নিঃশব্দে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। শিমু তবুও একা বাড়ি যাচ্ছে না। এক হাতে জামা উঁচু করে ধরে অন্য হাতে জুতোজোড়া নিয়ে হাঁটু জল পেরিয়ে সামনে এগুতে এগুতে বললো, ‛মা আমাকেও বকবে রে। বলে আসি নি।’ নিয়ন আবার পেছনে ফিরলো। জোয়ারের পানিতে ব্লকগুলো তলিয়ে গেছে। গভীরতা পরিমাপ করা কষ্টকর। শিমুকে আসতে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো, ‛আর আসিসনে শিমু। পানি বেশি। তলিয়ে যাবি।’ বলতে বলতে পাশ দিয়ে যাওয়া বড় এক লঞ্চের ঢেউ আছড়ে পড়লো শিমুল তলায়। শিমু মুহূর্তেই ব্লকের মধ্যে পড়ে গিয়ে পানিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। নিয়ন দৌড় মারলো। তাতে বেশ লাভ হলো না। দুজনেরই তলিয়ে যাওয়ার অবস্থা হলো। পানি খুব বেশি না। কোমর অব্দি হবে। কিন্তু একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়ায় দুজনের কেউই উঠে দাঁড়াতে পারলো না। কোনোমতে নিয়ন শিমুর ...

শিমুল ২

বারান্দায় টিনের চালের ছিদ্র দিয়ে ঘরে রোদ এসে পড়ে। বৃষ্টির দিনে এই ছিদ্র বেয়ে বেয়ে পানি নিয়নের চৌকিতে পরে। নিয়ন তখন ছিদ্র বরাবর বালতি দিয়ে রাখে। রাতের বেলা কষ্ট বেশি হয়। বৃষ্টি নামলে আর ঘুমানো যায় না। বালতি এদিক সেদিক করতে হয়। দু-তিন জায়গা বেয়ে পানি পড়ে। কখনো হটাৎ বৃষ্টিতে নিয়ন সহ সব ভিজে একাকার হয়ে থাকে। তাতে নিয়নের আপত্তি নেই, সহজে জ্বর-সর্দি লাগে না তাই। তবুও সালাম শেখ প্রতি বর্ষায় নতুন টিন লাগিয়ে দিবেন বলেন। কিন্তু লাগানো হয় না। ভেতরে মাত্র দুটো ঘর, নিয়নের তাতে জায়গা হয় না। বারান্দায় ছোট্ট একটা ঘর, তবুও তো খারাপ না; শীতে চুইয়ে পড়া শিশির, বর্ষায় পানি আর গ্রীষ্মে রোদের সাথে খেলা। 

শিমুল ১

জন্ম থেকে প্রায় আট বছর পার হয়েছে নিয়নের সাথে জীবনের। আর নিয়ন? মাত্র তো চার মাস আগে পৃথিবীতে এসে থেকেছে একা। তার মধ্যে হাটতে শেখা, কথা বলতে শেখা, তারপর না শুরু হয়েছে সম্পর্কে বেঁধে রাখতে শেখা। তার মানে এইতো কিছুদিন একসাথে থাকা। মাত্র আট বছর বয়সে কতটুকুই বা পথচলা। তবুও কতো সুন্দর গেঁথে গেছে জীবনের সাথে জীবন, একজনকে ছাড়া অন্যজন কতো একা! মানুষটার জন্য বুকের ভেতর কতো কতো মায়া! কিন্তু এখন কোনো মায়া নেই, নিয়নকে ঘরে ঢুকতে দেখে খুব রাগ দেখাতে ইচ্ছে করলো শিমুর। ‛কিরে আসলি যে আবার? খুব তো পাত্তাই দিলি না আমায়, বললি আর ফিরবি না।’ ‛কাকা বললো কানতাছস নাকি, তাই আসলাম।’ ‛কানতাছি না? তো আয়, কান্না থামা, পরে আবার চলে যা, যাহ।’ ‛তুই তো কানতাছসই না, কাকা মিথ্যা বলছে। কাকা?’ সালাম শেখ পুকুর পাড় থেকে দৌড়ে আসলো। আবার কি ঝামেলা পাকালি তোরা? এই দেহি কান্দছ, আবার এহন কি নিয়া ঝগড়া করছ? ‛আব্বা আমি কানছি কহন? তুমি মিথ্যা কইছো কেন নিয়নরে?’ সালাম শেখ শিমুর কোথায় জবাব দিলেন না। ব্রু কুঁচকে আবার বাইরে বেরিয়ে গেলেন। ততক্ষনে পারু বিবির গলার স্বর শোনা যাচ্ছে। চিৎকার চেঁচামেচি দেখে নিয়ন আর শিমুও বেরিয়ে এলো। ‛হায় আল্লাহ গো...

শিমুল

শিমু বেশি সুন্দর নাকি শিমুল? না তো, শিমুল ফুল। শিমুল এখনো হয়নি। মাত্র তো ফুল ফুটেছে। একটাই শিমুল গাছ নদীর পাড়ে। জায়গার নামও শিমুল তলা। ফুলগুলো সরাসরি নদীতে গিয়ে পরে। বেশিক্ষন থাকে না, তলিয়ে যায়।  তবুও গাছ থেকে পড়ার পর তলিয়ে যাওয়া অব্দি দেখতে খারাপ লাগে না। বেশিক্ষন ধরে দেখতে পারলে মুগ্ধতা থাকতো না। আচ্ছা, এতো মুগ্ধতা কেনো শিমুল ফুলে? শিমুল ফুল কি শিমুর চাইতে বেশি সুন্দর? কি অদ্ভুত ভাবনা! পেছন থেকে আবারও ডাকলো শিমু; ‛নিয়ন বাড়ি যাবি না?’ ‛না, তুই যা। আর যাবো না তোদের বাড়ি।’ ‛তোদের বাড়ি, তোদের বাড়ি বলছিস কেন? তোর বাড়ি না?’ ‛তোদের ঘরে খাই ঘুমাই, আমার বাড়ি হয় কেমনে সেটা?’ শিমু সামনে এসে পাথরের ব্লকে পা ছড়িয়ে বসলো। শিমুল ফুলের সাথে শিমুর কোনো মিল নেই। শিমুলে ফুলের রঙ টকটকে লাল। শিমুর গায়ের রঙ টকটকে লাল কিংবা ফর্সা ও নয়। শ্যামবর্ণ। চোখগুলো ভাসা ভাসা। অসম্ভব মায়া চোখ দু’টোতে। কিন্তু চোখের মধ্যে মায়াটুকু কি শুধু নিয়নের জন্যই? নাকি সবার জন্য সমপরিমাণ মায়া দিয়ে চোখ বানিয়েছে বিধাতা? তাহলে কি শিমু মায়াবতী? মায়াবতীদের কথায় সহজে গলতে নেই। নিয়ন মুখ ফিরিয়ে থাকে। শিমু মুখোমুখি কথা বলার জন্য নিয়নের গ...