পোস্টগুলি

মে, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সঙ্গোপনে ৬

গেটের সামনে লেখা বেবি কেয়ার ইউনিট। ভেতরে সামান্য ভিড়। ভিড় থাকাটাই স্বাভাবিক। প্রতিদিন নতুন নতুন মুখ নিয়ে অনেক নবজাতক প্রথমবারের মতো পৃথিবীর আলো দেখে এই ওয়ার্ডে। নবজাতকের চিৎকারে মায়ের মনে দুশ্চিন্তার মেঘ কাটে। নতুন অতিথিকে দেখতে আত্মীয় স্বজনের কমতি নেই। খাবার দাবার আসে সঙ্গে। কিন্তু নতুন অতিথির মুখে শুধু মায়ের বুকের শালদুধটুকুই জুটে। এক ভদ্রলোক মিষ্টির প্যাকেট হাতে এসে বললো, ‛ভাই। বাবা হইলাম, ধরেন।’ বলেই একটা মিষ্টি হাত বাড়িয়ে দিলো। হাসপাতালে অচেনা লোকের দেওয়া খাবার কেউ খেতে চায় না। কিন্তু এই ভদ্রলোক তার খুশিটা সবার মধ্যে বিলিয়ে দিতে চাইছেন। আমি এইটুকু খুশি ওনার কাছ থেকে নিবো না, তা কি করে হয়। মিষ্টিটা খেতে খেতে বললাম, ‛ভাই ছেলে বাবু না মেয়ে বাবু?’ চোখে মুখে খুশির আমেজ। বললো, ‛আল্লাহ আমারে জান্নাত দিছে ভাই। এই নিয়ে দুই মেয়ে হইলো।’ ওনার খুশি আমার মুখে ফুটালাম। হাসি দিয়ে বললাম, ‛যাক আলহামদুলিল্লাহ ভাই।’ ভাবলাম এইটুকু সখ্যতার খাতিরে ভদ্রলোক হয়তো আরেকটা মিষ্টি সাধবেন। তা হলো না। আমি ওয়ার্ডে গেলাম। দুদিনে চিত্রার শরীর কিছুটা ফুলে গেছে। স্যালাইনের প্রভাব। আগের রিপোর্ট অনুযায়ী কালকে ড...

সঙ্গোপনে ৫

দুপুর গড়িয়ে বিকেল, তারপর সন্ধ্যা। আরো একটা দিন চিত্রা কে বেডে রেখে বাইরে আমি একা। সকালে রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে আসার পর দুপুরে আবার গিয়েছিলাম চিত্রার কাছে। আমার রাগ তো কিছুক্ষন পরেই ভেঙে যায়। কিন্তু চিত্রার যেই অভ্যাস, সে করবে অভিমান। আমার আর কি করার। গিয়ে অভিমান ভাঙাতে হবে। গিয়ে দেখি সকালে যেভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কাঁদতে বসেছিলো, ঐভাবেই মুখ ফিরানো। কিন্তু চোখ মুখ একেবারে শুকনো। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে। গিয়ে হাত ধরে ডাক দিলাম, ‛চিত্রা?’ তাও মুখ ঘুরিয়ে আমাকে দেখলো না। যেভাবে দেয়ালে তাকিয়ে ছিলো, ঐভাবেই চোখ স্থির করে রেখে দিছে। আমি হাত ধরে টান মারলাম। বললাম, ‛এই, তাকাও এইদিকে।’ টান মেরে ওর হাত তা ছাড়াতে চাইলো। বললো, ‛উফ ছাড়ো তো। তুমি যাও, বাইরে যাও। নার্স দেখলে বকা দিবে।’ আমি হাতটা কাছে টানতে টানতে বললাম, ‛তুমি আগে তাকাও আমার দিকে। না তাকানো পর্যন্ত যাবো না আর এখান থেকে।’ ‛বসে থাকতে পারলে থাকো, আমার কি।’ 'ক্ষুধা লাগছে তো। খাবো না?' চিত্রা হটাৎ আমার দিকে তাকিয়ে উঠে বসতে চাইলো। বাম হাতে স্যালাইন চলছে, তাই উঠতে পারলো না। চেহারায় একটু অস্তিরতা ভাব নিয়ে বললো, ‛কি? দুপুরে ...

সঙ্গোপনে ৪

যেভাবে ঘুমে চোখ বুজে আসছিলো, ভেবেছিলাম সারারাত ঘুম হবে। তেমনটা হয় নি। রাত তিনটার দিকেই ঘুম ভেঙে গেছে। আরো একটু হতো হয়তো, এক ভদ্রলোক জাগিয়ে না তুললে। যেভাবে চিত হয়ে শুয়েছিলাম দেয়ালের উপর, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একটু কাত হলেই সিঁড়িতে পরে যাওয়ার উপক্রম হতো। তাই হয়তো ভদ্রলোক ডাক দিয়ে জাগিয়ে দিলেন। ‛এই ভাই ঘুমাইতাছেন নাকি? উঠেন, পরবেন তো নিচে।’ কাঁধের উপর ভদ্রলোকের হাতের স্পর্শ পেয়ে যেই হাত পা ছড়াতে যাবো, ওমনি চোখ মেলতেই দেখি দেয়ালের উপরে কোনোরকম শুয়ে আছি। হটাৎ আতকে উঠি। এই রে, একটু ভালো ভাবে নড়াচড়া করলেই তো নীচে সিঁড়ির উপর পড়ে যেতাম। নাক মুখ ফাটতো নিশ্চিত। নিজে ইনজার্ড হলে অবস্থা খারাপ ছিলো। চিত্রার দেখাশুনার জন্য আমি আছি, আমাকে দেখবে কে। দুইহাতে চোখ ঢলছিলাম। আমাকে ঘুমে কাতর দেখে ভদ্রলোক বললেন, ‛বেশি ঘুম আসলে নীচে একটা মাদুর বিছাইয়া ঘুমান ভাই। এমনে ঘুমাইলে তো নিচে পইরা মাথা ফাটাইবেন পরে।’ ঘড়ি দেখলাম, তিনটার বেশি বাজে। বললাম, ‛না ভাই থাক। আর ঘুমানো লাগবো না। এই রাত্র করে মাদুর পাবো কই আবার।’ ভদ্রলোক উনার সাথে আমাকে নিয়ে গেলেন। বললেন, ‛সারারাত এইখানে এমনে বইসা থাকবেন? চলেন আমার সাথে। আমার...

সঙ্গোপনে ৩

সন্ধ্যার পর হাসপাতালে অসাধু লোকের আনাগোনা বেড়ে যায়। ভদ্র লোকের লেবাস লাগিয়ে কিছু দালাল ঘোরাফেরা করে। সবচেয়ে বেশি ধান্দা হয় আইনি জটিলতা বিষয়ক রোগীকে ঘিরে। আত্মহত্যা করা কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে, সাথে সাথে একটা মামলা হয়। রোগী কোনো কারণে মারা গেলে আত্মহত্যার কারণ খুঁটিয়ে দেখতে হাসপাতালে লাশ পোস্টমর্টেম করা হয়। থানা থেকে ছাড়পত্র দিলে তবেই লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরা যায়। অনেকেই থানা পুলিশ করতে ভয় পায়। তাই রোগীকে ঘিরে যতো ঝামেলা থাকে, তা পারিবারিক ভাবেই মিটিয়ে ফেলতে পছন্দ করে। তাই আত্মহত্যা করা রোগী কেউ মারা গেলে পরিবারের লোকজন গিয়ে দালালদের শরণাপন্ন হয়। দালালদের সাথে পুলিশের যোগসূত্র আছে। ধান্দা করা টাকা অল্প কিছু দালালরা পায়, বেশিরভাগটাই পুলিশের পকেটে যায়। মূলকাজটাও পুলিশই করে। পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে দিলেই হাসপাতাল থেকে লাশ ছেড়ে দেওয়া হয়। একটু বেশি টাকা দিলে, পোস্টমর্টেম ছাড়াই লাশ হাতে পাওয়া যায়। এরকমটা প্রতিনিয়তই হচ্ছে এখানে। এই হাসপাতাল ঘিরে যতো মামলা সব শাহবাগ থানাতেই হয়। শাহবাগ থানার একজন ইন্সপেক্টর এসেছে হাসপাতালে রাতের ডিউটিতে। তাকে ঘিরেই একটু ভিড়ের মতো হয়েছে ইমার্জেন্সি গেট...

সঙ্গোপনে ২

হাসপাতালে ওয়ার্ডের সামনে বারান্দায় সিরিয়ালে মাদুর পাতানো। রোগীর সাথে আত্মীয়রা দল বেঁধে হাসপাতালে চলে আসে। এখানেই খাওয়া ঘুম সব। বেশিরভাগ মাদুরে বালিশ নেই। কাপড়ের ব্যাগ বালিশের মতো করে মাথার নিচে দিয়ে ঘুমাচ্ছে কেউ কেউ। সারাক্ষনই কেউ না কেউ ঘুমায়। কারণ হাসপাতালে চোরের ভয় আছে। সবাই একসাথে ঘুমিয়ে গেলে বিপদ। তাই কেউ ঘুমায় কেউ জেগে থাকে। পালাবদল করে সবাই ঘুমায়, তবুও সবার চোখের নিচেই কালি, মুখে ক্লান্তির ছাপ। ছোট বাচ্চা কাচ্চাও কম নেই। এক পরিবারের বাচ্চারা অন্য পরিবারের বাচ্চাদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করে। বাচ্চারা নিজের সমবয়সী কাউকে পেলে সহজেই তার সাথে মিশে যায়। বন্ধু ভাবে, বিশ্বাস করতে শুরু করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস করবার ক্ষমতা কমে আসে। বড়দের মধ্যে তেমন বিশ্বাস নেই। একে অপরের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করছে। তার কারণও আছে। অতি তুচ্ছ জিনিস এখানে চুরি হয়। কার লবনের বাটি চুরি হয়ে গেছে, তাই নিয়ে কতো ঝগড়া। ছুরি, প্লেট এমনকি পানির বোতল চুরি হয়। হাসপাতালে পানি কিনে খেতে হয়। কেউ তাই পানির বোতল জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। দেয়াল মোটা হওয়ায় বারান্দায় গ্রিলের সামনে অনেকখানি জায়গা আছে। সেটাকে কেউ ...