সঙ্গোপনে ২

হাসপাতালে ওয়ার্ডের সামনে বারান্দায় সিরিয়ালে মাদুর পাতানো। রোগীর সাথে আত্মীয়রা দল বেঁধে হাসপাতালে চলে আসে। এখানেই খাওয়া ঘুম সব। বেশিরভাগ মাদুরে বালিশ নেই। কাপড়ের ব্যাগ বালিশের মতো করে মাথার নিচে দিয়ে ঘুমাচ্ছে কেউ কেউ। সারাক্ষনই কেউ না কেউ ঘুমায়। কারণ হাসপাতালে চোরের ভয় আছে। সবাই একসাথে ঘুমিয়ে গেলে বিপদ। তাই কেউ ঘুমায় কেউ জেগে থাকে। পালাবদল করে সবাই ঘুমায়, তবুও সবার চোখের নিচেই কালি, মুখে ক্লান্তির ছাপ। ছোট বাচ্চা কাচ্চাও কম নেই। এক পরিবারের বাচ্চারা অন্য পরিবারের বাচ্চাদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করে। বাচ্চারা নিজের সমবয়সী কাউকে পেলে সহজেই তার সাথে মিশে যায়। বন্ধু ভাবে, বিশ্বাস করতে শুরু করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস করবার ক্ষমতা কমে আসে। বড়দের মধ্যে তেমন বিশ্বাস নেই। একে অপরের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করছে। তার কারণও আছে। অতি তুচ্ছ জিনিস এখানে চুরি হয়। কার লবনের বাটি চুরি হয়ে গেছে, তাই নিয়ে কতো ঝগড়া। ছুরি, প্লেট এমনকি পানির বোতল চুরি হয়। হাসপাতালে পানি কিনে খেতে হয়। কেউ তাই পানির বোতল জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। দেয়াল মোটা হওয়ায় বারান্দায় গ্রিলের সামনে অনেকখানি জায়গা আছে। সেটাকে কেউ কেউ তাকের মতো করে ব্যবহার করছে। জগ, গ্লাস, খাবারের প্লেট, বাটি ইত্যাদি সেখানে সারিবদ্ধ ভাবে সাজিয়ে রাখা। এই ওয়ার্ডে সবই মহিলা রোগী। তাই রোগীর সাথে আসা আত্মীয় বেশিরভাগ মহিলা আর কারো কারো সাথে বাচ্চা। পুরুষ আছে তবে কম। প্রয়োজনীয় কিছু লাগলে জোগাড় করে দিয়ে আবার বাইরে চলে যায়। মাঝে মাঝে দিনের বেলায় কেউ এসে খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে যায়। তেমন বিশেষ কারণ না থাকলে রাতের বেলা পুরুষেরা হাসপাতালে থাকে না। বাসায় চলে যায়। পরদিন সকালে আবার সারাদিনের খাবার নিয়ে আসে। মাদুরের উপর গামছা বিছিয়ে দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসে। এভাবে কখনো সপ্তাহ ফুরিয়ে যায়। হাসপাতালে একটা ভাসমান সংসারের মতো হয়ে যায়।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, এরকম সংসারের অভাব নেই এখানে। একটু খানি ফাঁকা জায়গা নেই, বসবো গিয়ে।

কিনারে বুড়ো মতো একটা মহিলা কুঁজো হয়ে শুয়ে আছে। মাদুর অর্ধেক করে পাতানো। উনি একা। হাসপাতালে হয়তো উনার ভাসমান সংসার হয় নি।
কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই আড়চোখে তাকালো। খানিকক্ষণ তাকিয়ে উঠে বসলো। বললো,
‛কিছু বলবা বাবা?’
‛না মানে একটু বসার জায়গা খুঁজছিলাল খালাম্মা।’
একপাশে সরে গিয়ে বললো,
‛বসো এখানেই।’
চোখের নিচে কেমন একটু কালো দাগ। বয়সের সাথে তেমন বেমানান না। তবুও ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট চেহারায়। বললাম,
‛এখানে কতদিন ধরে আছেন খালাম্মা?’
‛তিন দিন হইলো। আর পারি না বাবা। আবার মেয়েরে রাইখা যাইতেও পারি না।’
‛আর কেউ আসেনি সাথে?’
‛মেয়ের জামাই আসে সন্ধ্যায় অফিস শেষ কইরা। রাতে থাহে না। সকালে আসে আবার খাবার দিয়া অফিসে যায়।’
‛সারাদিন হাসপাতালে থেকে নিজেও তো অসুস্থ হচ্ছেন। আর কেউ সাথে থাকলে পারতো। পালাবদল করে থাকতেন।’
‛কি করমু বাবা। মেয়ে আমার, জ্বালাও তাই আমারই।’
কথার সাথে দীর্ঘশ্বাস ফেলে খালাম্মা উঠে দাঁড়ালো। বললো,
‛বসো। আমি একটু ওয়ার্ডে যাই। মেয়েরে দেইখা আসি।’

তেমন কিছু নেই মাদুরে। একটা কাপড়ের ব্যাগ ছিলো, সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। টাকা পয়সা অথবা মূল্যবান কিছু আছে হয়তো। অপরিচিত আমাকে বিশ্বাসই বা করবেন কেনো। ক্ষনিকের পরিচয়ে এখানে অনেকে একসাথে থাকা। রোগী সুস্থ করে বাড়ি ফিরে কেউ কাউকে মনেও রাখে না। তবে কিছু বাসনপত্র আছে একটা চটের ব্যাগে। আর একটা পানির বোতল। পানির বোতল মাথার নীচে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। মাদুর অর্ধেক করে পাতানো তাই পা সারে না। বিশ্রামহীন শরীর, ক্লান্ত চোখ, আমি আর ঘুম আটকে রাখতে পারি না। পাশে রাখা পাউরুটি আর আমের প্যাকেটটা নিয়ে একটু চিন্তা আছে। ঘুমোলে কেউ নিয়ে যেতে পারে। নিয়ে গেলে যাক। চিত্রার জন্য কিনেছিলাম। ওকে খাওয়াতে পারি নি। এই খাবার আমার মুখ দিয়ে ঢুকবে না। খালাম্মা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না। ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসে।

করতোয়ার পাড়ে আমাদের লাল রঙের গরুটা হটাৎ ক্ষেপে গেছে। চিত্রা গিয়েছিলো আমাকে নিয়ে আসতে, এখন চিত্রার পিছু নিয়েছে। পিছু হটতে হটতে চিত্রা নদীর পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। কিছুক্ষনের মধ্যে চিত্রাকে গুঁতো দিয়ে নদীতে ফেলে দিবে। চিত্রা সাঁতার জানে না।
ভাঙ্গন নদীর পাড়, চিত্রা আর উঠতে পারবে না। আমি দূর থেকে চিৎকার করছি ‛চিত্রা!’

হটাৎ ঘুম ভাঙতে দেখি, আমার সামনে ছোট আকারের একটা জটলা। খালাম্মা আমার কপালে হাত দিয়ে রাখছে। ঘুমের ঘোরে আমার ‛চিত্রা’ বলে চিৎকার হয়তো বাইরে শোনা গেছে। বাস্তবে চিত্রা কখনো করতোয়ার পাড়ে যায় নি। দূর, এরকম স্বপ্নের কোনো মানে হয় না। সামনে দাঁড়ানো সবার চোখে আতঙ্কের ছাপ ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। খালাম্মা কপাল থেকে হাত সরিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‛স্বপ্নে খারাপ কিছু দেখেছিলা বাবা?’
আমি একটু লজ্জিত হলাম। বললাম,
‛তেমন কিছু না খালাম্মা।’
‛তুমি ঘুমিয়ে গেছো দেইখা, আমি তোমার পাশেই বসা ছিলাম। হটাৎ চিত্রা চিত্রা বইলা চিৎকার শুরু করলা। কি বিশ্রী অবস্থা। ভয় পাওয়াইয়া দিছো। দেখি এইদিকে আসো তো একটু।’
খালাম্মা আমার মাথায় কি যেনো পড়ে পড়ে ফুঁ দিতে শুরু করলো। আমি বাধ্য ছেলের মতো মাথা নীচু করে বসে রইলাম।

হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসারের লোক আসছে, ওয়ার্ডের সামনে থেকে পুরুষ সব তাড়িয়ে দিতে। আটটা বাজতে বেশি সময় বাকি নেই। ঘুমানোর আগে একটু ভুল হয়েছে, চিত্রাকে বলে আসা হয় নি। ঘুমিয়েছি অনেকক্ষন হয়ে গেছে। চিত্রার সাথে একবারও দেখা হয় নি। চিত্রা অপেক্ষা করেছে। আমি একটু পর পর আসবো বলে এসেছিলাম। আটটায় বেরিয়ে গেলে আবার ঢুকতে পারবো কাল সকাল আটটায়। এতক্ষন একা থাকবো খারাপ লাগছে না। মন খারাপ লাগছে কারণ চিত্রা এতক্ষন একা থাকতে পারবে না। রুটি আর আমের প্যাকেটটা খালাম্মাকে দিয়ে গেলে খারাপ হবে না। উনি আপনজনের মতো এতক্ষণ আমাকে আগলে রেখেছে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে মানুষ মানুষকে তেমন একটা মনে রাখে না। কিন্তু আমি খালাম্মাকে কখনোই ভুলবো না!

চিত্রার বেডের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে নার্স এসে বললো, ‛ইনজেকশন দিয়েছি, জাগাবেন না।’
মন আরো বেশি খারাপ হলো। আমি জানি চোখ বন্ধ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চিত্রা আমার জন্য অপেক্ষা করেছে। দেখতে চেয়েছে, আমার হাতটা একটু ধরতে চেয়েছে। আমি আসি নি। কতোবার অভিমান করেছে, আবার নিজে নিজেই অভিমান ভেঙে চোখের জলে গাল ভিজিয়েছে। না বলে এভাবে ঘুমানো ঠিক হয় নি, বড্ড ভুল হয়ে গেছে। কি করবো, এখন তো ও ঘুমোচ্ছে। জেগে থাকলে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তাতেও অভিমান না ভাঙলে উঠবস করতাম। লোকে দেখাতো, হাসাহাসি করতো। তাতে কি, পরক্ষনে চিত্রাই থামতে বলতো। অভিমান ভেঙে একটু পেছনে সরে গিয়ে ওর পাশে বসতে বলতো। হাতটা ধরতো। অভিমানী কান্না থামিয়ে সত্যিই মুখে হাসি ফুটাতো। যারা অল্পতেই কাঁদতে পারে, অভিমান করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে, তারা আবার খুব সহজেই অভিমান ভেঙে মুখে হাসির রেখা ফুটাতে পারে!

ঘুমালে অন্য মেয়েদেরকে কেমন লাগে জানি না, তবে চিত্রাকে অন্যরকম লাগে। একটু বেশি সুন্দর। খুব করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। লোকে দেখছে দেখুক, নুয়ে গিয়ে ওর কপালে একটা চুমু এঁকে দিলাম। চিত্রা জেগে থাকলে ছাড়তো না। জড়িয়ে ধরতে চাইতো। ঠোঁটযুগল বাড়িয়ে দিতো। ভীষণ লজ্জার ব্যাপার হতো। লোকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো! এরকম ছেলেমানুষি ব্যাপারটা চিত্রার মধ্যে প্রথম থেকেই ছিলো।

ছয়তলা বাড়ির দোতলায় মাঝারি আকারের ফ্লাট। পশ্চিমের ঘরটির সাথে বেলকুনি সংযুক্ত আছে। বেলকুনিতে দাঁড়ালে সূর্য অস্ত যাওয়াটা সুন্দর মতো দেখা যায়। এমনিতেই খুব ভোরে আমার ঘুম ভাঙে না। সকালে সূর্যোদয় দেখতে না পারাটাও তাই আফসোসের কারণ হতে পারে না। তবে পূর্ণিমায় চাঁদ দেখার জন্য মাঝরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, সমস্যা এই। চাঁদ খানিকটা পশ্চিম দিকে হেলে গেলে, তখন বেলকুনিতে আসি। তবে মাসে চার পাঁচ দিনের বেশি রাতজাগা হয় না। পূর্ণিমা পেরিয়ে অমাবস্যা আসতে শুরু করে। আস্তে আস্তে চাঁদ ছোট হয়ে আসে। অর্ধ গোলাকৃতির চাঁদ আমার ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে চাঁদের সৌন্দর্য সবার চোখে ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে। চিত্রাকে ডাকলে পাওয়া যায় না। একদমই রাত জাগে না। নিজে নিজেই চা বানিয়ে বেলকুনিতে বসি। ঢাকায় এসে চা বানানোটা খুব ভালো শিখেছি। রান্নাঘরে আলো জ্বলতে দেখলে রুপম বাবু মাঝে মাঝে উঠে আসেন। চা হাতে পিছু পিছু এসে বেতের চেয়ারে বসেন। রুপম বাবু শব্দ করে চেয়ে চুমুক দেন। আমি একদৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকি। নিজের গল্প বলি;
‛জানেন রুপম বাবু, গ্রামে এভাবে আরাম করে চাঁদ দেখার সুযোগ ছিলো না কখনো। টিনের বেড়ার ঘর। বেলকুনি তো দূরের কথা, জানালা ও নেই। বাইরে সময় নিয়ে বসে থাকার উপায় নেই। বাড়ির চারপাশ ঘেরা জঙ্গল। রাতে মশার উপদ্রব বাড়ে। বর্ষাকালে তো বাড়িতে সাপের আনাগোনাও বেড়ে যায়। যখন বাড়িতে ধান উঠতো, তখন ভাগ্যক্রমে পূর্ণিমা থাকলে চাঁদ দেখার সুযোগ হতো। রাত জেগে বাইরে বড় চুলায় খড় জ্বালিয়ে ধান সেদ্ধ করা লাগতো। আগুনের উত্তাপে সাপ কেঁচো উঠোনে আসার কথা না। পূর্ণিমা থাকলে এতো বড় বড় পাতিলে ধান ভরাট করা, আবার সেদ্ধ করে খালি করার মতো পরিশ্রম একটুও গায়ে লাগতো না। চাঁদে তাকালে দুচোখে শুধু মুগ্ধতা খেলা করতো। মস্তিষ্কে কবিতার লাইন বাসা বাঁধতো।’

রুপম বাবু মাথা নিচু করে আমার কথা শোনেন। চা শেষ না হতে একটা কথা ও বলেন না। বাড়িওয়ালা শখ করে বাড়ির পেছনে নারকেল গাছ লাগিয়েছেন। শহরে ডাব-নারকেলের কদর খুব, তাই হয়তো। চাঁদ আর একটু পশ্চিমে হেলে পড়লে নারকেল গাছের ছায়া এসে বেলকুনিতে পরে। রুপম বাবু মাথা উঁচু করে নারকেল গাছের দিকে তাকান। বলেন;
‛শুনো, জোৎস্না উপভোগ করতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকবার প্রয়োজন নেই। চাঁদ তার আলোর সবটুকু জোৎস্না আকারে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে দেয়। চাঁদ আসলে মানুষকে মুগ্ধ করে না। চাঁদের ছড়িয়ে দেওয়া আলো প্রকৃতিকে জোৎস্নাকারে সাজিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করে।’
রুপম বাবুর কথা আমার পুরোপুরি সত্যি মনে হয় না। আমি তো বসার ঘরের দেয়ালে টাঙিয়ে রাখা রুপম বাবুর আঁকা চিত্রকর্মগুলো দেখে যতটা না মুগ্ধ হই, রুপম বাবুকে দেখে তার চেয়ে বেশি মুগ্ধ হই। স্রষ্টা সুন্দর না হলে তার সৃষ্টি সুন্দর হতে পারে না। আমার তাই চিরকাল শ্রষ্টাতেই আগ্রহ বেশি। তাই বলে সৃষ্টিকেও তাচ্ছিল্য করবার ক্ষমতা রাখি না।

রুপম বাবু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের খন্ডকালীন শিক্ষক। শিক্ষকতার বাইরে যতটুকু সময় পান, আঁকাআকি নিয়েই পরে থাকেন। আমাকে তো প্রথমদিন পেয়েই ছাড়লেন না। একদম দু ঘন্টা সিটিং নিয়ে নিলেন। বসার ঘরেই একপাশে ছোট করে স্টুডিওর মতো করা। ঘরে ঢুকতেই বললেন,
‛এসেছো মিহির, তোমার জন্যই তো অপেক্ষা।’
আমি অবাক হয়ে তাকালাম। বললাম,
‛আমার জন্য অপেক্ষা?’
বললেন,
‛হ্যাঁ। ফ্রেশ হয়ে এসো তাড়াতাড়ি, আমাকে একটা সিটিং দিতে হবে। ছবি আকবো।’
আমার বিস্ময় কাটলো না। খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। মাত্র তো এলাল! রুপম বাবুকে আমি আগে দেখি পর্যন্ত নি। শুনেছি শুধু, উনি চিত্রার স্বামী। মুখোমুখি একটু ভালোমতো পরিচয় পর্যন্ত হলো না, তাতেই উনি আমাকে ছবির মডেল বানিয়ে ফেললেন! চিত্রাকে রান্না ঘরে পাঠিয়ে আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখলেন স্টুডিওতে। এদিকে ক্ষুধায় আমার পেট জ্বলে। পেটে ক্ষুধার যন্ত্রনা নিয়ে আমাকে দু ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। কি যে রাগ হয়েছিলো প্রথম দিনে। তবে আমার রাগ ওইদিনই শেষ। সময় বাড়ে, মানুষটার প্রতি আমার মুগ্ধতা বাড়ে। প্রথম দিনে কয়েকটি স্কেচ নিলেন। বললেন, আরো সময় লাগবে। দু তিনদিন কমপক্ষে সিটিং দিতে হবে। ছবি আঁকা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুল, দাড়ি কিছু কমানো যাবে না।
বিপদটা এখানেই হলো। কলেজে ভর্তি হলাম। চিত্রার কথা হলো, এসব গ্রামীন বেশ পাল্টে কলেজে যেতে হবে। নিজে নিজেই বকবক করে,
‛অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হওয়া ছেলেদের দেখতে লাগবে কচি খোকার মতো। অথচ, মনে হচ্ছে কলেজের কোনো বড় ভাই।’
আমি কিছু বলি না। সামনে এসে বলে,
‛কেমন ক্ষেত ক্ষেত লাগছে দেখছো? স্যাররা কিছু বলে না?’
‛আরে না। স্যাররা কিছু বলবে কেনো।’
‛নিজের কাছেও খারাপ লাগে না?’
‛উহু। আমার আরো ভালোই লাগে। সবার থেকে আলাদা। হা হা হা।’
আমার হাসিতে চিত্রা বিরক্ত হয়। বলে,
‛তুমি হলে আমার বন্ধু। আর শুনছো অন্য কারো কথা?’
‛কার কথা শুনছি আমি?’
‛রূপমের ছবির জন্যই তুমি এই বেশ পাল্টাচ্ছো না। বলো ঠিক তো?’
আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে তাঁকিয়ে থাকি। চিত্রা মিথ্যে বলে নি। কিন্তু রুপম বাবুর কথাও ফেলতে পারি। আমার নীরবতায় চিত্রার বিরক্তি বাড়ে। বলে,
‛দূর তোমাকে কেনো বলছি। দোষটা তো আসলে তোমার না।’
চিত্রা ঘরে গিয়ে সজোরে দরজা লাগিয়ে দেয়। খেয়াল করি, চিত্রা আর রুপম বাবুর শোবার ঘর আলাদা। লাইব্রেরি ঘরটাতে রুপম বাবু ঘুমান। পরে জানতে পারি, আমার ঘরটাতে উনি ঘুমাতেন। আমি আসবো জেনে লাইব্রেরি ঘরে একটা ছোট খাট পেতেছেন। স্বামী স্ত্রী আলাদা কেনো ঘুমাবে, এরকম আশ্চর্যজনক ব্যাপার আমার মাথায় ঢুকে না।

ছবির কম্পোজিশনটা ছিলো একটু অদ্ভুত কিন্তু মনোমুগ্ধকর। একটা যুবক বয়সী কৃষক হাওরে ধান ক্ষেতের আইলে দাঁড়িয়ে। ধান অর্ধেক পানিতে ডুবে আছে। আকাশ অন্ধকার করে মেঘ ঢেকে আছে। কৃষক মেঘের দিকে তাকিয়ে আনমনে দাঁড়িয়ে আছে। যদি এই মেঘ বৃষ্টি আকারে আসে, তাহলে ধান পুরোপুরি ডুবে যাবে সেই সাথে কৃষকের স্বপ্ন। আর যদি কালবৈশাখী আসে, তাহলে মেঘ উড়ে যাবে, স্বপ্ন বেঁচে যাবে। কিন্তু কালবৈশাখী আসলে ও বিপদ, হয়তো ঘরের নড়বড়ে খুঁটি উপরে ফেলে চাল উড়ে যাবে। বৈশাখ মাসে এরকম নিশ্চিত ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা একজন অসহায় কৃষকের মডেল হয়ে আমি সিটিং দিচ্ছি। মনে হলো, এতো সুন্দর চিত্রকর্ম আমি আগে কখনো দেখি নি। রুপম বাবুকে বলি,
‛আপনার এই ছবি তো একজিবিশনে ফার্স্ট হবে নিশ্চিত।’
রুপম বাবু ক্যানভাসে সবুজ চড়াচ্ছিলেন। রং তুলি রেখে হটাৎ রান্না ঘর থেকে চা বানিয়ে স্টুডিওতে ফিরেন। আমার হাতে চায়ের কাপ দিয়ে আনমনে তাকিয়ে থাকেন ক্যানভাসের দিকে। বলেন,
‛কলেজে একজিবিশনে আমার ছবি সবসময়ই ফার্স্ট হতো। কিন্তু এখন আর সেরকম কিছুই হয় না।’
‛আগে হতো, এখনো তাহলে হবে। আপনি চেষ্টা করলেই ভালো আঁকতে পারবেন রুপম বাবু।’
রুপম বাবু তাকান আমার দিকে। বলেন,
‛বাবাও চাইতেন, আমি ভালো ছবি আঁকি। কিন্তু আজও পারলাম না। মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানো মিহির?’
আমি আগ্রহ নিয়ে জানতে চাই,
‛কি?’
রুপম বাবু দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলেন,
‛আমার ভেতরকার শিল্পীস্রষ্টা মরে গেছে!’

দীর্ঘশ্বাসের সাথে সাথে রুপম বাবুর গল্প বলা ঐদিন ঐটুকুতেই থেমে যায় নি। মানুষ দীর্ঘশ্বাস চিরদিন বুকে লুকিয়ে রাখতে পারে না। চাপা আর্তনাদ একদিন ফেটে চিৎকারে রূপ নেয়। সেই চিৎকার শোনানোর জন্য মানুষ চিরকাল কাউকে খুঁজে। রুপম বাবু হয়তো খুঁজে পেয়েছিলেন আমাকে! কতোকাল যেনো এ আর্তনাদ চাপা ছিলো বুকের অদূরে হৃদপিন্ডের আড়ালে। আমি স্তব্ধ, আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকি আর্তনাদ ফেটে বের হওয়া সেসব চিৎকারের সামনে!

বাবা হরিরাজ ব্যানার্জির ছিলো আফিমের নেশা। নেশায় ডুবে থাকতেন বলেই হয়তো ছেলের নেশাটাও ধরতে পেরেছিলেন। বাড়ির এমন কোনো দেয়াল নেই, যেখানে  রুপম ব্যানার্জির পেন্সিলে স্কেচ পড়তো না। ছবি আঁকার প্রতি ছেলের এতো নেশা দেখে ধরেই নিয়েছিলেন, ছেলে একদিন শিল্পী হবে। বলতেন,
‛যার নেশা যেখানে, তাকে ডুবে থাকতে দাও সেখানে।  একাকী নিঃসঙ্গতায় ছেড়ে দাও নেশার কবলে, সে নিশ্চিত সোনা হয়ে ফিরবে।’
পরিবার, পরিজন সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন কলকাতায়। বললেন, শিল্পী হতে হলে কোনো পিছুটান তাড়া করা যাবে না। কোনো সম্পর্কের মায়াজালে আটকে থাকা যাবে না। কিন্তু বাবার কথা রুপম ব্যানার্জি রাখতে পারেন নি। আটকে পড়েছিলেন মায়াজালে!
আর্ট কলেজে সহপাঠী অনন্যা সেনের প্রেমে পড়েন। কি ভীষণ প্রেম হলো দুজনের। ক্যানভাসে যতো নারীমূর্তি আঁকেন ঘুরে ফিরে সেই অনন্যা সেনকেই আঁকেন। কোনটাতে তার মুখের গড়ন, কোনটাতে দাঁড়ানোর ভঙ্গি, কোনটাতে বা চোখের চাহনী। সম্পর্কটা এমন এক পর্যায়ে ছিলো যে, ক্যাম্পাসে জানাজানি হয়ে গেলেই বিপদ। তাই ক্যাম্পাসের বাইরে আউটডোর স্কেচের আড়ালে চলে প্রেম, যাতে ভেতরে কেউ জানতে না পারে। কিন্তু কেউ কিছু জানবে না, কিছু দেখবে না, তবুও প্রেম গোপন থাকার জিনিস না। ক্যাম্পাসে কেউ জানলো না ঠিকই, কিন্তু অনন্যা সেনের বাড়ির সর্বত্রে প্রেমের খবর পৌঁছে গেলো। শুরু হলো হই চৈ। বাবা রাজবির সেন মেয়েকে কড়াকড়ি হুমকি দিয়ে রাখলেন; হয় প্রেম ছাড়তে হবে, নয়তো কলেজ! অনন্যা সেন পিছিয়ে পড়লেন। প্রেম চুকিয়ে ফেললেন। সারাজীবন যাতে অন্তত একটা সম্পর্ক থাকে, তাই বন্ধুত্বের দাবী নিয়ে সামনে দাঁড়ালেন। রুপম ব্যানার্জি ছিলেন নিজ সিদ্ধান্তে অনড়।
যাকে চেয়েছেন নগ্নতায় আলো আধারীতে আর শাড়িতে স্পষ্ট দিবালোকে। যার ঠোঁটযুগল চিরকাল রাখতে চেয়েছেন নিজের দখলে। যাকে নিয়ে ফুলশয্যা এঁকেছেন ক্যানভাসে। সে বন্ধু থাকবে কিন্তু অন্যের দখলে? না, কোনোভাবেই না। প্রেমিকা শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে পারে না ,কখনোই না।
রুপম ব্যানার্জি জেদ ধরেন,
‛আমার সবটুকু চাই। প্রেম হারিয়ে বন্ধুত্ব আমি চাই না। প্রেম নাহয় বিরহ, যেকোনো একটা চাই!’

অনন্যা সেন বিরহই দিলেন। ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট বয় হয়ে ফাইনাল ইয়ারে উঠলেন রুপম ব্যানার্জি, আর বাবার আদেশ মেনে নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস চাকরিজীবীকে নিয়ে ঘর বাঁধলেন অনন্যা সেন। স্রোতের মতো ভেসে আসা প্রেম, সামান্য বালুচরেই আটকে গেলো! প্রেম কি এমন হওয়া উচিত? এইটুকু বাঁধা সামলাতে না পারলে তো প্রেমে পড়াই অনুচিত! প্রেম হওয়া উচিত ভয়ংকর কোনো ঝড়, কিংবা বিপদজনক সাইক্লোনের মতো। যেখানে সব বাঁধাই উপরে ফেলা সম্ভব। শেষটায় দুজনের চাওয়া এক হয় নি। বাঁধা তাই উপরে ফেলা সম্ভব হয় নি। প্রেম হারিয়ে গেছে। পথ আলাদা করে দুজন চলে গেলেন দুদিকে। রুপম ব্যানার্জি ডুবে গেলেন চরম নিঃসঙ্গতায়। মানুষ নিঃসঙ্গতা তখনই পুরোপুরি টের পায়, যখন কেউ সঙ্গ দিয়ে আবার একা ফেলে চলে যায়। ছবি আঁকা হয়, ডিপার্টমেন্টের ফার্স্টবয়ের ছবি একজিবিশনে সবসময়ই ফার্স্ট হয়। কিন্তু নারীমূর্তি আর আঁকা হয় না!

গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট এন্ড ক্রাফ্ট। সংক্ষেপে সবাই কলকাতা আর্ট কলেজ নামে চিনে। কলকাতায় যেটাকে বলা হয় শিল্পীদের আঁতুরঘর। রুপম ব্যানার্জির প্রানপ্রিয় শিক্ষক সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় । আর্ট কলেজের এই শিক্ষক মেয়ের জন্মের পরই হয়তো ঠিক করে রেখেছিলেন, মেয়েকে শিল্পীই বানাবেন। তাইতো জন্মের পরই মেয়ের নাম রাখেন চিত্রা। চিত্রা মানে ছবি। ছবি দেখতেও ছবির মতোই! যেনো ঈশ্বরের নিজ হাতে আঁকা কোনো চিত্রকর্ম! কিন্তু এ চিত্রকর্ম জীবন্ত। হাসলে ঝনঝন শব্দ হয়। সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় সারাজীবন ভেবেছেন, মেয়ের আদলে একটি ছবি আঁকবেন। কিন্তু আঁকা হয় না। যেই রুপে ঈশ্বর চিত্রাকে বানিয়েছেন, শিল্পীরা এতো সুন্দর করে হয়তো ক্যানভাসে আঁকতে পারেন না! এতো সুন্দর চোখের দিকে তাকিয়ে ক্যানভাসে চোখ ফেরানো যায় না। চিত্রাকে তাই বানাতে চাইলেন স্রষ্টা, যে নিজেই আঁকবে!
মেয়েকে ভর্তি করিয়ে দিলেন আর্ট কলেজে। ছবি আঁকার কলাকৌশল ভালো ভাবে রপ্ত করতে মেয়েকে পাঠাতেন প্রিয় ছাত্র রুপম ব্যানার্জির কাছে। চিত্রা ফার্স্ট ইয়ারে, আর রুপম ব্যানার্জি তখন ফাইনাল ইয়ারে। চিত্রা রুপম ব্যানার্জির কাছে অবসরে রং তুলি নিয়ে পড়ে থাকে। চিত্রার আর ফিরতে ইচ্ছে করে না। ছবি আঁকা হোক নাহোক, এই মানুষটার স্টুডিওতেই সারাক্ষন পড়ে থাকতে ইচ্ছে করে। নিঃসঙ্গ মানুষকে সঙ্গ দিতে কার না ভালো লাগে? একাকিত্বে ভোগা মানুষরা নিঃসঙ্গতার গল্প বলে মানুষকে মুগ্ধ করতে জানে। চিত্রার এখন আর এই মানুষটাকেই ছাড়তে ইচ্ছে করে না। সারাক্ষন লেপ্টে থাকতে ইচ্ছে করে! নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে উঠতে রুপম ব্যানার্জি তখন একজন সঙ্গী খুঁজছিলেন। তিনি চিত্রার প্রেমেও পড়েন নি। ক্যানভাসে কখনো চিত্রার ছবি আঁকারও চেষ্টা করেন নি। কিন্তু চিত্রাকে নিজের প্রতি আকর্ষণ করেছেন। চিত্রাও এ আকর্ষণে সাড়া দিয়েছে। প্রেম হয় নি, ভালবাসা-বাসি হয় নি, তবুও এই মানুষটিকে ছেড়ে থাকতে ইচ্ছে হয় নি!

ফাইনাল ইয়ার শেষ করে যেদিন দিনাজপুরে ফিরলেন, চিত্রাকে বিয়ে করে সঙ্গে নিয়ে এলেন! পরীক্ষা শেষে চিত্রাকে শুধু জিজ্ঞেস করেছিলেন,
‛আমার সাথে যাবে?’
চিত্রা জানতো, যেতে হলে তাকে সব ছাড়তে হবে। পরিবার ছাড়তে হবে, দেশ ছাড়তে হবে, এমনকি রং তুলি! চিত্রা সব ছেড়ে দিলো! রুপম ব্যানার্জির মায়ায় আটকে গেলো।

রুপম ব্যানার্জি বাবার চাওয়ামতো শিল্পী হয়ে ফিরতে পারলেন না, ফিরলেন বউ নিয়ে! বাবার সাথে আর বনিবনা হলো না। চাওয়া না পাওয়ার সংসারে চিত্রাও তেমন মানিয়ে নিতে পারলো না। আসতে হলো ঢাকায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন চাকরি নিলেন একজনের জায়গায়। ভদ্রলোক লন্ডনে গেছেন শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে। ফিরবেন এক বছর পর। ততোদিন রুপম ব্যানার্জি থাকবেন তার জায়গায়।

রুপম ব্যানার্জি সংসার চেয়েছিলেন, নিঃসঙ্গতায় সঙ্গী চেয়েছিলেন, এসব অভাব পূরণে চিত্রাকে কাছে টেনেছিলেন। আর চিত্রা ক্ষণিকের মুগ্ধতায় এই মানুষটার প্রেমে পড়েছিলো। সারাজীবন এই মানুষটির সাথে লেপ্টে থাকতে চেয়েছিলো। কিন্তু প্রেম হলো না। যেইটুকু ভালোবাসা-বাসি হলো সেইটুকু দায়িত্ববোধের ভালোবাসা! রুপম ব্যানার্জি চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কখনোই ক্যানভাসে আঁকতে পারেননি চিত্রাকে। যতবারই নারীমূর্তি আঁকতে চেয়েছেন, ভুল করে অনন্যা সেনকেই এঁকে ফেলেছেন। অনন্যা সেনকে তিনি ভুলতে পারেন নি। চিত্রাকেও তেমন ভাবে কাছে টানতে পারেন নি। প্রেম যেমন গোপন থাকতে পারে না, তেমনি অপ্রেমও টের পাওয়া কষ্টকর না। রুপম ব্যানার্জির ভেতরে অনন্যা সেনের স্মৃতিরা মেতে থাকতো খুনের তাগিদে। সেখানে খুন হয়েছে চিত্রার প্রেম। একই ছাদের নিচে ভালো না বেসেও দুটো মানুষ সারাজীবন একসাথে অপ্রেমে কাটিয়ে দিতে পারে! নগ্নতায় স্পর্শ রেখে কামনা মেটাতে পারে। কিন্তু সবাই পারে না। এই দুটো মানুষেরই তো শিল্পী হবার কথা ছিলো। শিল্পী মানেই স্রষ্টা। হতে হয় আলাদা। এদেরও আলাদা মানুষ হবারই কথা ছিলো। তাই হয়তো নগ্নতাও এদের আর কাছে টানে না! অপ্রেমে থাকতে থাকতে একই ছাদের নিচে দুটো মানুষের দেয়াল আলাদা হয়ে যায়! সংসার টিকে থাকে অথচ, ছাদে ফাটল ধরে যায়!

যেমনি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রুপম বাবু এসব গল্প বলতে শুরু করেন, তেমনি শেষ করেন দীর্ঘশ্বাসেই। আমি তখন ঘরের সিলিংয়ে তাকাই। রুপম বাবুর কথা মতো ছাদে ফাটল চোখে পড়ে না! সিলিংয়ে ঝকঝকে সাদা কালারের রঙ করা। শুধু রঙটাই চোখে পড়ে, ভেতরে ভাঙ্গন থাকলেও তা চোখে পড়ার কথা না। মানুষেরও তেমনি উপরটাই দেখি, ভেতরটা না। মানুষের ভেতরটা ভেঙে গেলে, তা কখনো চোখে দেখা যায় না। রূপম বাবু আর চিত্রার ভেতরকার ভেঙে যাওয়া বাইরে থেকে আমি তেমন একটা দেখতে পাই না। যে ভাঙ্গন চোখে দেখা যায় না, তা কখনো জোড়া লাগানো যায় না। এই বৃথা চেষ্টা আমি করিও নি কখনো। দুটো মানুষকে শুধু আলাদা আলাদা ভাবে বুঝতে চেষ্টা করেছি। দুজনকেই সঙ্গ দিয়েছি। দুটো মানুষেরই নিঃসঙ্গতার দেয়াল ভেঙে দিয়েছি!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এখনো ভালোবাসি তোমায়

বলতে পারিনি "ভালোবাসি"!

একটি প্রত্যাখানের গল্প: "তবুও ভালোবাসি"