বাড়িভাড়া কমাচ্ছেন না বাড়িওয়ালারা, ক্ষতি কার?
গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা আলোচিত সংবাদ দেখলাম;
ভাড়ার জন্য ধানমন্ডির এক বাড়িওয়ালা শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে বের দেওয়ার পাশাপাশি মূল্যবান সনদপত্র ময়লার বাগাড়ে ফেলে দিয়েছেন।
দেখা যাচ্ছে করোনার মতো মহামারীর এই সময়টাতেও আমাদের কিছু মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধটুকু জাগ্রত হয় নি। মানবিক মূল্যবোধের কথা নাহয় পড়েই বলছি। আগে লাভ-লসের হিসেবে আসা যাক।
বাংলাদেশ মেস অর্গানাইজেশনের তথ্যমতে ঢাকায় ব্যাচেলর মেস বাসার সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। ভাড়াটিয়া পরিষদের তথ্যমতে এসব মেস বাসগুলোতে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই প্রায় ২০ লাখ। সরকারি বেসরকারি কাজের সাথে যুক্ত এমন ব্যাচেলর আছেন প্রায় ১০ লাখ। এবং গার্মেন্টস কর্মী ব্যাচেলর আছেন ৫ থেকে ৬ লাখ।
এমতবস্থায় কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকার কারনে, শিক্ষার্থীরা অনেকেই ঢাকা ছাড়তে চাইছেন। সেই সাথে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সদস্য ও গার্মেন্টস কর্মী সাটাই হয়ে তারাও গ্রামের বাড়ির দিকে চলে যাচ্ছেন। সবার ঢাকা ছাড়ার মূল কারণই বাড়ি ভাড়া। করোনার কারণে ঢাকায় কাজের পরিমান কমে আসছে। তাই কেউ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরিচ্যুত হলে এতো টাকা বাড়িভাড়া দিয়ে ঢাকায় থেকে নতুন কোনো কাজ খোঁজার চেষ্টা না করে সোজা গ্রামে পাড়ি দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া কমিয়ে আনলে, সবাই হয়তো এভাবে ঢাকা ছাড়তে চাইতো না। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ ঢাকায় টিউশনি পেশার সাথে জড়িত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শুধু টিউশনির জন্য এতো টাকা ভাড়া গুনে কেউ ঢাকায় থাকতে চাইছেন না। এক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া কমিয়ে আনলে, শিক্ষার্থীদেরকে ঢাকায় থেকে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতো। এবং যারা চাকরিচ্যুত হচ্ছেন, নতুন কাজের সন্ধানে কিংবা করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় ঢাকা থেকে যেতে পারতো। যেহেতু, তাদের জীবিকাই ঢাকামুখী। জীবিকার জন্য তারা হয়তো আবার ঢাকাতেই ফিরবে। বাড়ি ভাড়া কিছুটা শিথিল করলে, লোকগুলো ঢাকাতেই থেকে যেতো।
শিক্ষার্থী এবং চাকরিচ্যুতরা সবাই দলবেঁধে ঢাকা ছেড়ে দেওয়ার কারণে, ঢাকার অধিকাংশ বাসগুলোই খালি হয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে কিছু কিছু বাড়িওয়ালা একদমই ভাড়া পাচ্ছে না। ঢাকায় বেশিরভাগ বাড়িগুলোই ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমান লোন নিয়ে করা হয়। এক্ষেত্রে বাড়ি সম্পূর্ণ ফাঁকা পড়ে থাকায়, অনেকের লোন শোধ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাসা খালি পড়ে থাকলেও গ্যাস বিল, পানির বিল কিন্তু ঠিকই দিতে হচ্ছে।
লাভ লসের ক্ষেত্রে এখন অবশ্যই বলতে পারি, বাড়ি ভাড়া না কমিয়ে বাড়িওয়ালারা উল্টো ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ছেন।
এখন আসি মানবিক মূল্যবোধের কথায়।
ঢাকায় এমন কিছু বাড়িওয়ালা আছেন, যারা মাসের পর পর মাস বাড়িভাড়া না নিলেও তেমন অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বেন না। ঢাকায় শিল্পপতি বাড়িওয়ালা বেশি। ফলে বাড়ি ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে তাদের আয় সচল আছে। সব ঠিক থাকা সত্তেও এই মানুষগুলো বাড়িভাড়ায় এক রত্তি ছার দিতে রাজি নয়। রোজই শুনা যাচ্ছে সময়মতো ভাড়া দিতে না পারলে, বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পড়ে ঠিকই বাসা খালি পড়ে থাকছে। আমি এই কথাটা অন্তত আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, দূর থেকে ঢাকায় এসে খেটে খাওয়া মানুষেরা অন্তত করুণা নিতে অভ্যস্ত না। এরা পরিশ্রমী। পরিস্তিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে এরা ঠিক ভাড়া পরিশোধ করে দিবে। ভাসা ভাড়া কিছুটা শিথিল করে দিয়ে এই মানুষগুলোকে দিয়ে পরিশ্রম করানোর সুযোগ অব্যহত রাখতে হবে। এই মানুষগুলো পরিশ্রম করা ছেড়ে দিলে, করোনার কারণে দেশে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, তা আর কাটিয়ে উঠতে পারবো না।
লাভ-লসের হিসেব থেকে হোক আর মানবিক মূল্যবোধ থেকেই হোক, এই মুহূর্তে বাসাভাড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও শিথিলতা প্রয়োজন। তাহলে বাড়িওয়ালা কিংবা ভাড়াটিয়া কেউই আমরা খুব বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবো না। আমরা ঠিক একদিন বেঁচে ফিরবো এই অসুখের শহর থেকে। সেদিন অন্তত বলতে পারবো;
মহামারীতে দুঃখের সেই দিনগুলোতে আমরা একে অপরের পাশে ছিলাম।
©মহসিন মোল্লা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন