‛গড়পড়তা মানুষ’


ওমর ফারুক:
গ্রামীণ সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। যেসব জিনিস গ্রামীণ সমাজের প্রভাবক ছিলো সেগুলো বিলুপ্ত হতে বসেছে। মানুষের মধ্যে এখন সহমর্মিতা লোপ পেতে বসেছে। আগের সেই সাদাসিধা মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়না। মানুষের সমস্যা এখন ব্যাপক আর জটিল। পঞ্চায়েত প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সমাজ খাওয়ানোর একটা নিয়ম আগে খুব কদর পেয়েছিলো। মানুষ মানুষের উপকারে নিজেকে সামিল করতে পারাকে কর্তব্য মনে করতো। সময়ের সাথে সাথে হিজল, শরৎ এর মতো গড়পড়তা মানুষগুলো কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। দেশ ভাগের সময় এরা একবার ভাগ হয়েছে,  হিন্দু-মুসলিম টানাপোড়েনে আরেকবার ভাগ হয়েছে। সর্বশেষ ভাগ হতে বসেছে নগরায়নের প্রভাবে। সকালে লাল মোরগের ডাক, টিনের চালে টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ, মুখে আজানের শব্দ, হারিকেনের আলোয় পুঁথি পাঠ সবকিছুর পাঠ চুকিয়েছে। এখন গড়পড়তা মানুষ তৈরির একটা আলামত দেখা যাচ্ছে চারদিকে। কিন্তু এ প্রচেষ্টা সহজাত নয়।চাপিয়ে দেয়া বিষয় বাস্তবে রূপ নেয়া শ্রীহীন দেখায়। জোর করে, জল,পানি দিয়ে তো আর গড়পড়তা মানুষ তৈরি করা যাবে না। প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মেই এসব মানুষ তাদের প্রভাব, অবস্থান তৈরির প্র‍য়াস পেতো। সে অবস্থা এখন আর বর্তমান নেই। সবকিছু দখল নিয়েছে নগরায়ন। যান্ত্রিকতা মানুষের ভিতরকার সহজ,সরল চরিত্রটি কেড়ে নিয়েছে। মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি অমানবিক আর শ্রেণিচ্যুত। সহজে মানুষ অন্যের বিপদে এগিয়ে আসেনা,  মানুষ মানুষকে উপকার করার কথা ভাবেনা। মানুষের ধারণা উপকারের প্রভাব ইতিবাচক হয় না, মানুষ উপকারের প্রতিদান দিতে সচেষ্ট নয়। সময়ের সাথে সাথে মানুষের ভিতরকার যে পরিবর্তন হয়েছে সেটা এখন আর ভিতরকার বিষয় নেই, সেটা এতোটাই প্রকাশ হয়ে পড়েছে যে এটাই এখন মানুষের ব্যক্তি চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। সহজ সময়, সহজ মানুষগুলো কোথায় যে হারিয়ে গেল মানুষ পাশে থেকেও তা অনুভব করতে পারেনি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এখনো ভালোবাসি তোমায়

বলতে পারিনি "ভালোবাসি"!

একটি প্রত্যাখানের গল্প: "তবুও ভালোবাসি"