স্বপ্নবাজ মানুষেরা থামে না- থামিয়ে দেয় বাঁধা!

স্বপ্ন ভরা চোখে দু’হাত শূন্যে প্রসারিত করলে,
রঙিন ডানা এসে ভর করে কাঁধে।
উড়ে যেতে ইচ্ছে হয়; যেইটুকু চাওয়া লিখা আছে,
বুকের অদূরে জমা রাখা খামে!
কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ
আকাশ অন্ধকার করে মেঘ আসে।
স্বপ্ন ভরা দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
বাঁধা পেয়ে ডানা দুটো হারিয়ে যেতে চায়।
স্বপ্ন সব আধাঁরে মুছে থেমে যাবো? হায়!

না! একদমই না। স্বপ্নবাজ মানুষেরা থেমে যায় না!

আজকে একজন স্বপ্নবাজ মানুষ দেখেছি। খুব কাছ থেকে দেখেছি, রিকশায়। মানুষটার চোখে ক্লান্তির ছাপ দেখেছি কয়েকবার। জোরে জোরে নিঃশাস নেওয়ার শব্দ শুনেছি সহস্রবার। তবুও থেমে যায় নি, আমাকে নিয়ে গেছে গন্তব্যে। এতো কাছ থেকে একজন স্বপ্নবাজ মানুষকে দেখে অবাক হয়েছি অবশেষে।
বলছি; একজন রিকশাচালকের কথা!

করোনাকালের এই সময়টাতে অনেকে চাকরি হারিয়েছে, টিউশনি হারিয়েছে। পেট ভরে দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন পর্যন্ত ফুরিয়েছে। কিন্তু স্বপ্ন ফুরোয়নি এই রিকশা চালকের। ঢাকায় একটা প্রাইভেট কলেজে বিবিএ পড়ে। ২২/২৩ বছর বয়সের একজন যুবক। দুপুরের রোদ্রে শরীরের ফর্সা ত্বক লাল হয়ে গেছে। জানতে পারলাম, ঢাকায় টিউশনি করে থাকা-খাওয়া ও পড়ার খরচ চালাতো। করোনায় টিউশনি চলে গেছে। এখন শুধু বেঁচে থাকার লড়াই। মানুষটার ঝাপসা হয়ে আসা চোখে প্রচুর স্বপ্ন আছে। বড় হওয়ার সপ্ন। সমস্ত চাওয়া পূরণের স্বপ্ন। মানুষটা বেঁচে থাকলে স্বপ্নগুলো বেঁচে যাবে। তাই আজ প্রথমবারের মতো রিকশা নিয়ে পথে নেমেছে। পথ-ঘাট তেমন চিনে না। ভাড়া কতো নিবে, তাও জানে না। জানে, শুধু বেঁচে থাকতে হবে!

এই মানুষগুলোকেই আমি স্বপ্নবাজ মানুষ বলি। এরা যেমন স্বপ্ন বুনতে পারে, তেমনি স্বপ্ন পূরণের পিছু আমৃত্যু দৌড়াতে পারে। প্রতিটা মানুষেরই সমস্ত আয়ুষ্কাল কাটে স্বপ্ন বুনতে বুনতে। প্রতিনিয়ত মানুষ নতুন স্বপ্ন বুনে। স্বপ্ন বুনতে মানুষ আপনা আপনিই শিখে যায়। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ করা মানুষকে শিখে নিতে হয়। স্বপ্ন নামক ডানা দু’টো টিকিয়ে রাখবার জন্য লড়াই করতে হয়।

যেমন একদিন কোনো কারণে শহরের সমস্ত যানবাহন থেমে গেলো। যতো দূরেই হোক, গন্তব্যে পৌঁছাতে পা দু’টোকে তো ব্যবহার করা যেতে পারে। কিংবা জোয়ারের পানিতে সোজা রাস্তাগুলো ডুবে যাওয়ার পর, ভাটার অপেক্ষা না করে বাঁকা রাস্তায় হলেও গন্তব্যে রওনা দেওয়া যেতে পারে।

আমরা এন্ডু কার্নেগীকে চিনি। যিনি একজন গরিব ঘরের ছেলে ছিলেন। খামারে কাজ করতেন। পরবর্তীতে আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যাক্তি হয়েছিলেন। হলিউড অভিনেতা ব্রাড পিট, যিনি প্রথম জীবনে মোরগের ড্রেস পড়ে হোটেলবয় এর কাজ করতেন। বারাক ওবামার কথা সবাই জানি। মাত্র  দু’বছর বয়সে বাবা মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। মা ইন্দোনেশিয় এক যুবকে বিয়ে করার পর মায়ের সাথে চলে যান। পরবর্তীতে মাত্র দশ বছর বয়সে দাদা-দাদির কাছে চলে আসেন। কঠিন জীবন পার করে একসময় ঠিক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছেন। তার পরের ইতিহাস আমাদের অজানা নয়। আমেরিকার মতো দেশে পর পর দু’বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এই মানুষগুলো স্বপ্নবাজ মানুষ ছিলেন। স্বপ্নে পূরণের পথে সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করতে পেরেছিলেন।

জীবনের প্রতিটা মূহুর্তে বাঁধা উপরে ফেলবার মতো মানসিক দৃঢ়তা রাখতে হবে। সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে স্বপ্নের পথে এগুতে হবে। তবেই হওয়া যাবে স্বপ্নবাজ!
স্বপ্নবাজ মানুষেরা থামে না-থামিয়ে দেয় বাধা!


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এখনো ভালোবাসি তোমায়

বলতে পারিনি "ভালোবাসি"!

একটি প্রত্যাখানের গল্প: "তবুও ভালোবাসি"