সঙ্গোপনে ৮
হাসপাতালে কান্নাকাটি কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার না। সারাদিনই এদিক সেদিক থেকে কান্নার আওয়াজ আসে। চিত্রার ওয়ার্ডের সামনে যেতেই বুকটা ধপ করে উঠে। এতো চিত্রার কান্নার আওয়াজ! দৌড় দিলে আমার জুতোর শব্দে কান্নার আওয়াজ ঢাকা পড়ে যায়। চিত্রা বেডের সিট দুহাতের নখ দিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখছে। বন্ধ চোখে চোয়াল শক্ত করে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। তবুও কান্নার আওয়াজ বের হচ্ছে মুখ দিয়ে মাঝে মাঝে। আমি দৌড়ে এসে চিত্রার হাত ধরে পাশে বসি। সামনে নার্স দাঁড়িয়ে আছে। বললো,
‛ভাই প্রসবব্যথা।’
জিজ্ঞেস করলাম,
‛কি করবেন এখন আপনারা?’
‛অপারেশন থিয়েটারে নিতে হবে।’
‛তো নেন? কখন নিবেন?’
‛ডাক্তার আসলে বলতে পারবো ভাই। একটু বসেন।’
‛এতক্ষন ও এভাবে কষ্ট পাবে? এখনি নিয়ে যাওয়া যায় না?’
নার্স কেমন অসহায়ত্বের চোখে তাকালো। বললো,
‛পেশেন্ট আছে তো ভাই ভেতরে। এখানে সিরিয়াল থাকে একজনের পর একজনের।’
জিজ্ঞেস করলাম,
‛চিত্রার সিরিয়াল কখন?’
‛সিরিয়াল বলতে বিকেলে নিবে ডাক্তার বলে গেছে। আজকে তো পেশেন্টের ডেলিভারি ডেট। নরমালি আমরা প্রসবব্যথা উঠানোর জন্য পেশেন্টকে ইনজেকশন দেই অস্ত্রোপচারের আগে। কিন্তু আপনার পেশেন্ট এখনি সিরিয়াস কন্ডিশনে চলে যাবে ভাবি নি।’
আমাকে উঠতে হবে এখনি। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। যেভাবেই হোক, এখনি কিছু একটা করতে হবে। চিত্রার অবস্থা ভালো না। জিজ্ঞেস করলাম,
‛ডাক্তার কোথায়?’
‛একজনের ডেলিভারি চলছে ভেতরে। বের হলে কথা বলেন।’
আমি উঠতে পারি না। চিত্রা হাত শক্ত করে ধরে রাখছে।
‛খুব কষ্ট হচ্ছে চিত্রা?’
তাকিয়ে কোনো জবাব দিলো না। আমি আসার পর চিত্রার কান্না কিছুটা কমেছে। তবুও কষ্ট যে পাচ্ছে বুঝা যাচ্ছে। চোয়াল শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো কথা বলতে পারছে না। আমারও কেমন কান্না চলে আসছে। বললাম,
‛বলো কষ্ট হচ্ছে খুব?’
চিত্রা দুহাত দিয়ে আমার একহাত চেপে ধরলো। খুব আস্তে বললো,
‛ভয় লাগছে মিহির। তুমি থাকো এখানে।’
তবুও হাত ছাড়িয়ে উঠে দৌড় দেই। ওয়ার্ডের পেছনে অপারেশন থিয়েটার। সামনে লাল বাতি জ্বলছে। কেউ নাই। কার কাছে যাই?
আবার চিত্রার কাছে এসে বসি। আমি সহ্য করতে পারি না, চিত্রার এভাবে কষ্ট পাওয়া। নিজে কাঁদবো সাথে? তাও পারি না। না পারি সান্তনা দিতে। সান্তনা দেওয়ার মতোও কিছু নেই। প্রসবব্যথা স্বাভাবিক ভাবে হবারই ছিলো। কিন্তু এখনি কিছু করতে হবে আমাকে। আবার নার্স আসে। বলে,
‛ভাই বসেন একটু শান্ত হয়ে।’
‛কিভাবে বসবো শান্ত হয়ে। কিছু একটা করেন তাড়াতাড়ি আপনারা। অবস্থা দেখছেন?’
আমি কঠিন গলায় বলি কথাগুলো। নার্স আমার দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে যায় অপারেশন থিয়েটারের দিকে। একজন ডাক্তার বের হয়েছে। সামনে গিয়ে বলে,
‛স্যার, ওয়ার্ডে পেশেন্টের কন্ডিশন সিরিয়াস।’
ডাক্তারের চাহনিতে চিন্তার ছাপ। বলে,
‛বুঝলাম না কিছু। আচ্ছা ঠিকআছে, সব রেডি করো ওখানে। এটা শেষ হলে নিয়ে আসো ভেতরে।’
ডাক্তার আবার অপারেশন থিয়েটারে ঢুকলে নার্স আসে। বলে,
‛আপনি রক্ত নিয়ে আসেন তাড়াতাড়ি। এখনি নেওয়া হবে ভেতরে।’
ব্লাড ব্যাংকে যেতে হবে এখনি। চিত্রাকে কিভাবে রেখে যাই এখানে এই অবস্থায়? বলি,
‛চিত্রা কোনো ভয় নেই। আর একটু কষ্ট করো শুধু। আমি রক্ত নিয়ে আসছি হ্যাঁ?’
চিত্রা মুখে কিছু বলে না আর। সবটাই চোখের ইশারা। প্রিয়জনের সামনে আমি কাঁদি না। তবুও দেখি চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আজ এই কান্না আটকাতে পারছি না। কেনো এমন হচ্ছে? জোর করে চিত্রার হাতটা কেনো ছাড়িয়ে নিতে হলো? শেষে আবার বললাম,
‛আমি যাই চিত্রা।’
যেতে গিয়ে আরেকবার পেছনে তাকাই। চিত্রা তাকিয়ে আছে আমার পথে। ওর এতক্ষণের কষ্ট পাওয়া, দাঁত মুখ চেপে কান্না করা, সব ক্ষনিকের জন্য থেমে গেছে। কি অদ্ভুত চাহনি, কি মায়া সেখানে। চোখ দুটো কি যেনো বলছে। আমি বুঝি সে ভাষা। তবুও সাড়া দেই না। মুখ ফিরিয়ে হাটি সামনে।
ব্লাড ব্যাংক থেকে যে রক্তটা নিতে এসেছি এটা আমার রক্ত! আমি জানতাম না আমার রক্ত এ নেগেটিভ। রাতে পানি চাইতে গিয়ে এক ভদ্রলোকের সাথে সখ্যতা হলো। পানি খেয়ে আসার সময় বললো,
‛ভাই এইখানেই বসেন। নিচে ফ্লোরে বইসা আছেন, ঠান্ডা লাগবো তো।’
ভদ্রলোকের মাদুরে পা ছড়িয়ে বসলাম। বললাম,
‛ভাই চিন্তায় মাথা কিছু কাজ করতেছে না।’
‛হাসপাতাল মানেই তো চিন্তার জায়গা ভাই।’ ভদ্রলোক স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলেন। আমি বললাম,
‛কি যে করবো ভাই। এ নেগেটিভ রক্ত খুঁজে পেলাম না।’
ভদ্রলোক হেলান দেওয়া থেকে উঠে বসলেন। বললেন,
‛আমার ভাই ভাগ্য ভালো ছিলো। নিজের রক্তের সাথে মিল ছিলো। নিজেই দুই ব্যাগ দিছি।’
আমার হটাৎ খেয়াল হয়, আমার নিজের রক্তের গ্রূপ তো জানি না। এখন পর্যন্ত কোনো কারণে রক্ত পরিক্ষা করাতে হয় নি। জিজ্ঞেস করলাম,
‛ভাই রক্ত পরীক্ষা কোথায় করতে পারবো?’
বললেন,
‛এখন না। সকালে গেলে ব্লাড ব্যাংকেই করতে পারবেন।’
রাতে আর ঘুম আসে না। ভোরে ব্লাড ব্যাংকে আসি। একদম ক্ষীণ আশা ছিলো রক্তের গ্রূপ মিলতে পারে। কিন্তু এইটুকু আশাতেই প্রাপ্তি ছিলো। নিজের শরীরের দুই ব্যাগ রক্ত রেখে গেছি এখানে। এই রক্ত চিত্রার শরীরে লাগতে পারে। চিত্রা একদিন নিশ্চয় জানতে পারবে, আমাদের দুজনের রক্তের গ্রূপ এক!
রক্ত নিয়ে আসতে আসতে চিত্রাকে ভেতরে নিয়ে গেছে। একজন নার্স ছুটোছুটি করছে। আমাকে দেখেই বললো,
‛দেন তাড়াতাড়ি।’
রক্তের ব্যাগ দুটো হাতে পেয়েই নার্স দৌড় দিলো অপারেশন থিয়েটারের দিকে। ওনার ছুটোছুটিতে আমি চিন্তায় পড়ে গেছি। কেন যেনো শুধু কান্না আসতে চাইছে। আমি চাই না, চোখ দিয়ে এভাবে টপ টপ করে জল পড়ুক। তবুও পড়ছে। কেনো এমন হচ্ছে?
হাসপাতালে আসার আগের দিন পর্যন্তও দুজনে পরিচিত রুটিনেই অভ্যস্ত ছিলাম। চিত্রার চোখে স্বপ্ন। দিন গুনছি দুজনে একটি সুন্দর মুহুর্তের। আমাদের ছোট্ট ঘরে নতুন একটি মানুষ আসবে। বড় হবে। মানুষটাকে কথা বলতে শেখাবো, হাটতে শেখাবো। আমাদের রুটিন তখন পাল্টে যাবে। তবুও অবসরে ফিরে যাবো নিজেদের পুরোনো দিনে। টোটন যখন ঘুমাবে, আমরা দুজনে বেলকুনিতে গিয়ে বসবো। পাশাপাশি বসে চা খাবো। মাঝরাতে চাঁদ দেখবো। হটাৎ ঘুম ভেঙে গেলে, টোটন আমাদের কাউকেই কাছে পাবে না। একাকিত্বে চিৎকার দিবে। আমরা দুজনে দৌড়ে যাবো বেলুকুনি ছেড়ে ঘরে। চিত্রা আমার আগে গিয়ে পৌঁছে যাবে। টোটনকে কোলে নিয়ে কান্না থামাবে। সন্তানকে কোলে নিয়ে চিত্রা আমার কথা এক মুহূর্তের জন্য ভুলে যাবে? আমি জানি না। পূর্ণিমা ছিলো। চিত্রা বাইরে তাকিয়ে এক দৃষ্টিতে। জিজ্ঞেস করলাম,
‛কি ভাবছো এভাবে বলো তো?’
‛ভাবছি না তো কিছু। চাঁদ দেখছি।’
‛আচ্ছা, অমাবস্যায় চাঁদ দেখেছো কখনো?’
চিত্রা বিস্ময়ের চোখে তাকালো। বললো,
‛এই, এতো অদ্ভুত প্রশ্ন কই পাইছো তুমি? অমাবস্যায় আবার চাঁদ দেখবো কিভাবে?’
আমি চিত্রার দু কাঁধে আমার দু হাত রাখলাম। আরো একটু কাছে নিলাম মুখটা। বললাম,
‛ধরো অমাবস্যা। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমি কোনো কারণে বাসায় নেই। তুমি চিন্তিত মুখে বেলকুনিতে গ্রিল ধরে বাইরে তাকিয়ে। হটাৎ দেখো; বেলকুনির সামনে হাসিমুখে আমি দাঁড়িয়ে! বলো তোমার আকাশে তখন চাঁদ দেখবে না?’
চিত্রার বিস্ময় কাটে না। তবুও আরেকটু কাছে টেনে নিলো আমার মুখটা। কপালে একটা চুমো দিয়ে বললো,
‛আমি আজ আর চাঁদ দেখবো না। শুধু তোমাকে দেখবো।’
চিত্রার আদর পেয়েও আমি হাসলাম। বললাম,
‛ঠিকআছে, তুমি আমাকে দেখো। আর আমি চাঁদ দেখি।’
‛কেনো, আমি সুন্দর না?’ আমি বাইরে চাঁদের দিকে তাকানোর কিছুক্ষন পর চিত্রা খুব আস্তে বললো কথাটা। আমি চোখ ফেরালাম চিত্রার দিকে। বললাম,
‛তুমি সুন্দর। তাইতো বেশি দেখি না। তোমার সুন্দরে রহস্য রাখি।’
‛কোনো রহস্য রাখতে হবে না। আসো তো কাছে।’
চিত্রা সেদিন চাঁদের সাথেও হিংসে করলো। আমি তাকিয়ে থাকতে পারলাম না বাইরে চাঁদের দিকে। ওর উষ্ণ ঠোঁটযুগলে আমাকে বেঁধে নিলো প্রেমের ছত্রছায়ায়! রাত বাড়ে। চিত্রা ঘরে যেতে চায় না। সারারাত থাকবে বেলকুনিতে। বলে,
‛কালকে তো হাসপাতালেই চলে যাবো সকালে। কতোদিন আমাদের প্রেম করা হবে না। আজ রাতটা থাকো না জেগে?’
‛আরে তোমার শরীর খারাপ করবে। চলো তো ঘরে।’
আমি ঘরের দিকে পা বাড়ালে চিত্রা ধমক দিয়ে উঠে।
‛এই না, বসো। একদম যাবা না ঘরে।’
আমি জানি, রাত জাগলে চিত্রা সকালে উঠতে পারবে না। আমি বসেই ঘুমের ভান ধরি। চিত্রা রাগ দেখায়। বলে,
‛অন্যসময় আমাকে ঘুমোতে দেয় না। আজ আমি চাইছি জাগবো, সে ঘুমোবে।’
আমি বলি,
‛কি করি বলো? ঘুম পাচ্ছে তো খুব।’
চিত্রা আমার হাত ধরে টান মারে রাগে। বলে,
‛হুম, চলো ঘুমাবে।’
ঘরে গেলে চিত্রা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়। আমার আর ঘুম আসে না। খুব চিন্তিত থাকি সারারাত। হাসপাতালে গিয়ে থাকা হয় নি আগে কখনো। কিভাবে কি করতে হয় কিছু জানি না। কাল সকালে যেতে হবে হাসপাতালে। গেলেই ভর্তি করাবে। ডেলিভারির কমপক্ষে দুই তিন দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিবে। এই কয়টাদিন হাসপাতালে কাটাতে হবে। নিজের চিন্তার কথা চিত্রাকে বলা যাবে না। কিন্তু ঘুমও আসে না সারারাত আর। খুব ভোরে উঠে চা বানিয়ে খাই। চিত্রার ঘুম ভাঙার জন্য অপেক্ষা করি। ঘুম ভাঙে না। আমি চা এনে বিছানার পাশে রাখি। বলি,
‛উঠো না। কতো কষ্ট করে চা বানিয়েছি, ঠান্ডা হচ্ছে তো।’
চিত্রা আমার কথা শুনে। কিন্তু চোখ খুলে না। বলে,
‛উঠলে পরে আবার গরম করে দিও। আরেকটু ঘুমাই।’
‛এই তুমি ভুলে গেছো আজকে হাসপাতালে যাবো?’
চিত্রা উঠে বসে। বলে,
‛কয়টা বাজে?’
‛আটটার বেশি বাজে। তাড়াতাড়ি করতে হবে চলো।’
চিত্রা তবুও দেরি করে। বেলকুনিতে যায়। গ্রিল ধরে তাকিয়ে থাকে বাইরে। আমি গেলে পেছনে তাকায়। বলে,
‛হাসপাতালে তো এমন বেলকুনি নেই, তাই না?’
‛থাকলেই কি, বিছানা ছেড়ে তো উঠতে পারবা না।’
চিত্রা কেমন শিউরে ওঠে। বলে,
‛তুমি কিন্তু আমার কাছাকাছি থেকো সবসময়।’
হাতটা ধরে চিত্রাকে ঘরে টানতে টানতে বলি,
‛ঠিকআছে থাকবো। তুমি রেডি হও তো এখন।’
চিত্রা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নিজেকে দেখে। একটা টিপ হাতে নিয়ে পরখ করে আবার আয়নায় গেঁথে রেখে দেয়। চুলগুলো কি এলোমেলো। তবুও আগের মতন করে যত্ন করার প্রয়োজনবোধ করলো না। কোনোরকম খোঁপা করে নিলো। সামনে কাজল ছিলো, লিপিস্টিক ছিলো, সব পড়ে রইলো অবহেলায়। আজকে যেনো কোনোরকম সাজতে ইচ্ছে করছে না। আমি দাঁড়ালাম গিয়ে চিত্রার পাশাপাশি আয়নার সামনে। চিত্রা আয়নায় তাকালো আমার চোখে। নরম গলায় বললো,
‛তোমার চিন্তা হচ্ছে না?’
আমি আমার চিন্তিত মুখটা লুকানোর চেষ্টা করলাম। বললাম,
‛আরে দূর! চিন্তা কিসের। চার পাঁচ দিনের ই তো ব্যাপার।’
‛চার পাঁচ দিন পর কি হবে?’ শিশুসুলভ ভঙ্গিতে প্রশ্নটা করলো চিত্রা। যেনো কিছুই জানে না। আমি একটু কাছে গিয়ে ওর দুই কাঁধে আমার দুই হাত রাখলাম। বললাম,
‛আমরা আবার আমাদের ছোট্ট ঘরটাতে ফিরবো আমাদের টোটনকে নিয়ে।’
চিত্রা আমার বুকে ওর মাথাটা গুঁজে দিয়ে বললো,
‛ফিরতে চাই খুব তাড়াতাড়ি।’
আমি আলতো করে জড়িয়ে ধরে রাখলাম। বললাম,
‛তখন আমার বাকি থাকা অর্ধেক প্রেম ফিরিয়ে দিও!’
চিত্রা আমার বুকে নাক ঘষতে ঘষতে বলে,
‛দিবো মিহির। যতো প্রেম চাও দিবো।’
আমার মনে হলো, চিত্রা এভাবেই মিশে থাকুক আমার বুকে। জীবন থেমে গেলে যাক। সমস্ত পৃথিবী থেমে যাক। মহাপ্রলয় আসলে আসুক। ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়ে যাক। তবুও ছাড়বো না; চিত্রাকে এভাবে গভীর মমতায় জড়িয়ে রাখবো চিরকাল!
হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় দুপুর। ভর্তি করাতে ঝামেলা হয়নি তেমন। ওয়ার্ডে গিয়ে সিট পাওয়া নিয়েই ঝামেলা যা হওয়ার হয়। তবুও সবকিছু ঠিকঠাক করেছি আস্তে আস্তে। ওয়ার্ডের বাইরে আমার অনেক সংগ্রাম ছিলো। চিত্রাকে কিছুই বুঝতে দেই নি কখনো। বাকি সময়টুকুও আমি সামলে নিবো। যত কষ্ট করা লাগে আমি করবো। নিজের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি চিত্রাকে গভীর যত্নে আগলে রাখবো।
‛ভাই প্রসবব্যথা।’
জিজ্ঞেস করলাম,
‛কি করবেন এখন আপনারা?’
‛অপারেশন থিয়েটারে নিতে হবে।’
‛তো নেন? কখন নিবেন?’
‛ডাক্তার আসলে বলতে পারবো ভাই। একটু বসেন।’
‛এতক্ষন ও এভাবে কষ্ট পাবে? এখনি নিয়ে যাওয়া যায় না?’
নার্স কেমন অসহায়ত্বের চোখে তাকালো। বললো,
‛পেশেন্ট আছে তো ভাই ভেতরে। এখানে সিরিয়াল থাকে একজনের পর একজনের।’
জিজ্ঞেস করলাম,
‛চিত্রার সিরিয়াল কখন?’
‛সিরিয়াল বলতে বিকেলে নিবে ডাক্তার বলে গেছে। আজকে তো পেশেন্টের ডেলিভারি ডেট। নরমালি আমরা প্রসবব্যথা উঠানোর জন্য পেশেন্টকে ইনজেকশন দেই অস্ত্রোপচারের আগে। কিন্তু আপনার পেশেন্ট এখনি সিরিয়াস কন্ডিশনে চলে যাবে ভাবি নি।’
আমাকে উঠতে হবে এখনি। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। যেভাবেই হোক, এখনি কিছু একটা করতে হবে। চিত্রার অবস্থা ভালো না। জিজ্ঞেস করলাম,
‛ডাক্তার কোথায়?’
‛একজনের ডেলিভারি চলছে ভেতরে। বের হলে কথা বলেন।’
আমি উঠতে পারি না। চিত্রা হাত শক্ত করে ধরে রাখছে।
‛খুব কষ্ট হচ্ছে চিত্রা?’
তাকিয়ে কোনো জবাব দিলো না। আমি আসার পর চিত্রার কান্না কিছুটা কমেছে। তবুও কষ্ট যে পাচ্ছে বুঝা যাচ্ছে। চোয়াল শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো কথা বলতে পারছে না। আমারও কেমন কান্না চলে আসছে। বললাম,
‛বলো কষ্ট হচ্ছে খুব?’
চিত্রা দুহাত দিয়ে আমার একহাত চেপে ধরলো। খুব আস্তে বললো,
‛ভয় লাগছে মিহির। তুমি থাকো এখানে।’
তবুও হাত ছাড়িয়ে উঠে দৌড় দেই। ওয়ার্ডের পেছনে অপারেশন থিয়েটার। সামনে লাল বাতি জ্বলছে। কেউ নাই। কার কাছে যাই?
আবার চিত্রার কাছে এসে বসি। আমি সহ্য করতে পারি না, চিত্রার এভাবে কষ্ট পাওয়া। নিজে কাঁদবো সাথে? তাও পারি না। না পারি সান্তনা দিতে। সান্তনা দেওয়ার মতোও কিছু নেই। প্রসবব্যথা স্বাভাবিক ভাবে হবারই ছিলো। কিন্তু এখনি কিছু করতে হবে আমাকে। আবার নার্স আসে। বলে,
‛ভাই বসেন একটু শান্ত হয়ে।’
‛কিভাবে বসবো শান্ত হয়ে। কিছু একটা করেন তাড়াতাড়ি আপনারা। অবস্থা দেখছেন?’
আমি কঠিন গলায় বলি কথাগুলো। নার্স আমার দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে যায় অপারেশন থিয়েটারের দিকে। একজন ডাক্তার বের হয়েছে। সামনে গিয়ে বলে,
‛স্যার, ওয়ার্ডে পেশেন্টের কন্ডিশন সিরিয়াস।’
ডাক্তারের চাহনিতে চিন্তার ছাপ। বলে,
‛বুঝলাম না কিছু। আচ্ছা ঠিকআছে, সব রেডি করো ওখানে। এটা শেষ হলে নিয়ে আসো ভেতরে।’
ডাক্তার আবার অপারেশন থিয়েটারে ঢুকলে নার্স আসে। বলে,
‛আপনি রক্ত নিয়ে আসেন তাড়াতাড়ি। এখনি নেওয়া হবে ভেতরে।’
ব্লাড ব্যাংকে যেতে হবে এখনি। চিত্রাকে কিভাবে রেখে যাই এখানে এই অবস্থায়? বলি,
‛চিত্রা কোনো ভয় নেই। আর একটু কষ্ট করো শুধু। আমি রক্ত নিয়ে আসছি হ্যাঁ?’
চিত্রা মুখে কিছু বলে না আর। সবটাই চোখের ইশারা। প্রিয়জনের সামনে আমি কাঁদি না। তবুও দেখি চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আজ এই কান্না আটকাতে পারছি না। কেনো এমন হচ্ছে? জোর করে চিত্রার হাতটা কেনো ছাড়িয়ে নিতে হলো? শেষে আবার বললাম,
‛আমি যাই চিত্রা।’
যেতে গিয়ে আরেকবার পেছনে তাকাই। চিত্রা তাকিয়ে আছে আমার পথে। ওর এতক্ষণের কষ্ট পাওয়া, দাঁত মুখ চেপে কান্না করা, সব ক্ষনিকের জন্য থেমে গেছে। কি অদ্ভুত চাহনি, কি মায়া সেখানে। চোখ দুটো কি যেনো বলছে। আমি বুঝি সে ভাষা। তবুও সাড়া দেই না। মুখ ফিরিয়ে হাটি সামনে।
ব্লাড ব্যাংক থেকে যে রক্তটা নিতে এসেছি এটা আমার রক্ত! আমি জানতাম না আমার রক্ত এ নেগেটিভ। রাতে পানি চাইতে গিয়ে এক ভদ্রলোকের সাথে সখ্যতা হলো। পানি খেয়ে আসার সময় বললো,
‛ভাই এইখানেই বসেন। নিচে ফ্লোরে বইসা আছেন, ঠান্ডা লাগবো তো।’
ভদ্রলোকের মাদুরে পা ছড়িয়ে বসলাম। বললাম,
‛ভাই চিন্তায় মাথা কিছু কাজ করতেছে না।’
‛হাসপাতাল মানেই তো চিন্তার জায়গা ভাই।’ ভদ্রলোক স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলেন। আমি বললাম,
‛কি যে করবো ভাই। এ নেগেটিভ রক্ত খুঁজে পেলাম না।’
ভদ্রলোক হেলান দেওয়া থেকে উঠে বসলেন। বললেন,
‛আমার ভাই ভাগ্য ভালো ছিলো। নিজের রক্তের সাথে মিল ছিলো। নিজেই দুই ব্যাগ দিছি।’
আমার হটাৎ খেয়াল হয়, আমার নিজের রক্তের গ্রূপ তো জানি না। এখন পর্যন্ত কোনো কারণে রক্ত পরিক্ষা করাতে হয় নি। জিজ্ঞেস করলাম,
‛ভাই রক্ত পরীক্ষা কোথায় করতে পারবো?’
বললেন,
‛এখন না। সকালে গেলে ব্লাড ব্যাংকেই করতে পারবেন।’
রাতে আর ঘুম আসে না। ভোরে ব্লাড ব্যাংকে আসি। একদম ক্ষীণ আশা ছিলো রক্তের গ্রূপ মিলতে পারে। কিন্তু এইটুকু আশাতেই প্রাপ্তি ছিলো। নিজের শরীরের দুই ব্যাগ রক্ত রেখে গেছি এখানে। এই রক্ত চিত্রার শরীরে লাগতে পারে। চিত্রা একদিন নিশ্চয় জানতে পারবে, আমাদের দুজনের রক্তের গ্রূপ এক!
রক্ত নিয়ে আসতে আসতে চিত্রাকে ভেতরে নিয়ে গেছে। একজন নার্স ছুটোছুটি করছে। আমাকে দেখেই বললো,
‛দেন তাড়াতাড়ি।’
রক্তের ব্যাগ দুটো হাতে পেয়েই নার্স দৌড় দিলো অপারেশন থিয়েটারের দিকে। ওনার ছুটোছুটিতে আমি চিন্তায় পড়ে গেছি। কেন যেনো শুধু কান্না আসতে চাইছে। আমি চাই না, চোখ দিয়ে এভাবে টপ টপ করে জল পড়ুক। তবুও পড়ছে। কেনো এমন হচ্ছে?
হাসপাতালে আসার আগের দিন পর্যন্তও দুজনে পরিচিত রুটিনেই অভ্যস্ত ছিলাম। চিত্রার চোখে স্বপ্ন। দিন গুনছি দুজনে একটি সুন্দর মুহুর্তের। আমাদের ছোট্ট ঘরে নতুন একটি মানুষ আসবে। বড় হবে। মানুষটাকে কথা বলতে শেখাবো, হাটতে শেখাবো। আমাদের রুটিন তখন পাল্টে যাবে। তবুও অবসরে ফিরে যাবো নিজেদের পুরোনো দিনে। টোটন যখন ঘুমাবে, আমরা দুজনে বেলকুনিতে গিয়ে বসবো। পাশাপাশি বসে চা খাবো। মাঝরাতে চাঁদ দেখবো। হটাৎ ঘুম ভেঙে গেলে, টোটন আমাদের কাউকেই কাছে পাবে না। একাকিত্বে চিৎকার দিবে। আমরা দুজনে দৌড়ে যাবো বেলুকুনি ছেড়ে ঘরে। চিত্রা আমার আগে গিয়ে পৌঁছে যাবে। টোটনকে কোলে নিয়ে কান্না থামাবে। সন্তানকে কোলে নিয়ে চিত্রা আমার কথা এক মুহূর্তের জন্য ভুলে যাবে? আমি জানি না। পূর্ণিমা ছিলো। চিত্রা বাইরে তাকিয়ে এক দৃষ্টিতে। জিজ্ঞেস করলাম,
‛কি ভাবছো এভাবে বলো তো?’
‛ভাবছি না তো কিছু। চাঁদ দেখছি।’
‛আচ্ছা, অমাবস্যায় চাঁদ দেখেছো কখনো?’
চিত্রা বিস্ময়ের চোখে তাকালো। বললো,
‛এই, এতো অদ্ভুত প্রশ্ন কই পাইছো তুমি? অমাবস্যায় আবার চাঁদ দেখবো কিভাবে?’
আমি চিত্রার দু কাঁধে আমার দু হাত রাখলাম। আরো একটু কাছে নিলাম মুখটা। বললাম,
‛ধরো অমাবস্যা। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমি কোনো কারণে বাসায় নেই। তুমি চিন্তিত মুখে বেলকুনিতে গ্রিল ধরে বাইরে তাকিয়ে। হটাৎ দেখো; বেলকুনির সামনে হাসিমুখে আমি দাঁড়িয়ে! বলো তোমার আকাশে তখন চাঁদ দেখবে না?’
চিত্রার বিস্ময় কাটে না। তবুও আরেকটু কাছে টেনে নিলো আমার মুখটা। কপালে একটা চুমো দিয়ে বললো,
‛আমি আজ আর চাঁদ দেখবো না। শুধু তোমাকে দেখবো।’
চিত্রার আদর পেয়েও আমি হাসলাম। বললাম,
‛ঠিকআছে, তুমি আমাকে দেখো। আর আমি চাঁদ দেখি।’
‛কেনো, আমি সুন্দর না?’ আমি বাইরে চাঁদের দিকে তাকানোর কিছুক্ষন পর চিত্রা খুব আস্তে বললো কথাটা। আমি চোখ ফেরালাম চিত্রার দিকে। বললাম,
‛তুমি সুন্দর। তাইতো বেশি দেখি না। তোমার সুন্দরে রহস্য রাখি।’
‛কোনো রহস্য রাখতে হবে না। আসো তো কাছে।’
চিত্রা সেদিন চাঁদের সাথেও হিংসে করলো। আমি তাকিয়ে থাকতে পারলাম না বাইরে চাঁদের দিকে। ওর উষ্ণ ঠোঁটযুগলে আমাকে বেঁধে নিলো প্রেমের ছত্রছায়ায়! রাত বাড়ে। চিত্রা ঘরে যেতে চায় না। সারারাত থাকবে বেলকুনিতে। বলে,
‛কালকে তো হাসপাতালেই চলে যাবো সকালে। কতোদিন আমাদের প্রেম করা হবে না। আজ রাতটা থাকো না জেগে?’
‛আরে তোমার শরীর খারাপ করবে। চলো তো ঘরে।’
আমি ঘরের দিকে পা বাড়ালে চিত্রা ধমক দিয়ে উঠে।
‛এই না, বসো। একদম যাবা না ঘরে।’
আমি জানি, রাত জাগলে চিত্রা সকালে উঠতে পারবে না। আমি বসেই ঘুমের ভান ধরি। চিত্রা রাগ দেখায়। বলে,
‛অন্যসময় আমাকে ঘুমোতে দেয় না। আজ আমি চাইছি জাগবো, সে ঘুমোবে।’
আমি বলি,
‛কি করি বলো? ঘুম পাচ্ছে তো খুব।’
চিত্রা আমার হাত ধরে টান মারে রাগে। বলে,
‛হুম, চলো ঘুমাবে।’
ঘরে গেলে চিত্রা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়। আমার আর ঘুম আসে না। খুব চিন্তিত থাকি সারারাত। হাসপাতালে গিয়ে থাকা হয় নি আগে কখনো। কিভাবে কি করতে হয় কিছু জানি না। কাল সকালে যেতে হবে হাসপাতালে। গেলেই ভর্তি করাবে। ডেলিভারির কমপক্ষে দুই তিন দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিবে। এই কয়টাদিন হাসপাতালে কাটাতে হবে। নিজের চিন্তার কথা চিত্রাকে বলা যাবে না। কিন্তু ঘুমও আসে না সারারাত আর। খুব ভোরে উঠে চা বানিয়ে খাই। চিত্রার ঘুম ভাঙার জন্য অপেক্ষা করি। ঘুম ভাঙে না। আমি চা এনে বিছানার পাশে রাখি। বলি,
‛উঠো না। কতো কষ্ট করে চা বানিয়েছি, ঠান্ডা হচ্ছে তো।’
চিত্রা আমার কথা শুনে। কিন্তু চোখ খুলে না। বলে,
‛উঠলে পরে আবার গরম করে দিও। আরেকটু ঘুমাই।’
‛এই তুমি ভুলে গেছো আজকে হাসপাতালে যাবো?’
চিত্রা উঠে বসে। বলে,
‛কয়টা বাজে?’
‛আটটার বেশি বাজে। তাড়াতাড়ি করতে হবে চলো।’
চিত্রা তবুও দেরি করে। বেলকুনিতে যায়। গ্রিল ধরে তাকিয়ে থাকে বাইরে। আমি গেলে পেছনে তাকায়। বলে,
‛হাসপাতালে তো এমন বেলকুনি নেই, তাই না?’
‛থাকলেই কি, বিছানা ছেড়ে তো উঠতে পারবা না।’
চিত্রা কেমন শিউরে ওঠে। বলে,
‛তুমি কিন্তু আমার কাছাকাছি থেকো সবসময়।’
হাতটা ধরে চিত্রাকে ঘরে টানতে টানতে বলি,
‛ঠিকআছে থাকবো। তুমি রেডি হও তো এখন।’
চিত্রা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নিজেকে দেখে। একটা টিপ হাতে নিয়ে পরখ করে আবার আয়নায় গেঁথে রেখে দেয়। চুলগুলো কি এলোমেলো। তবুও আগের মতন করে যত্ন করার প্রয়োজনবোধ করলো না। কোনোরকম খোঁপা করে নিলো। সামনে কাজল ছিলো, লিপিস্টিক ছিলো, সব পড়ে রইলো অবহেলায়। আজকে যেনো কোনোরকম সাজতে ইচ্ছে করছে না। আমি দাঁড়ালাম গিয়ে চিত্রার পাশাপাশি আয়নার সামনে। চিত্রা আয়নায় তাকালো আমার চোখে। নরম গলায় বললো,
‛তোমার চিন্তা হচ্ছে না?’
আমি আমার চিন্তিত মুখটা লুকানোর চেষ্টা করলাম। বললাম,
‛আরে দূর! চিন্তা কিসের। চার পাঁচ দিনের ই তো ব্যাপার।’
‛চার পাঁচ দিন পর কি হবে?’ শিশুসুলভ ভঙ্গিতে প্রশ্নটা করলো চিত্রা। যেনো কিছুই জানে না। আমি একটু কাছে গিয়ে ওর দুই কাঁধে আমার দুই হাত রাখলাম। বললাম,
‛আমরা আবার আমাদের ছোট্ট ঘরটাতে ফিরবো আমাদের টোটনকে নিয়ে।’
চিত্রা আমার বুকে ওর মাথাটা গুঁজে দিয়ে বললো,
‛ফিরতে চাই খুব তাড়াতাড়ি।’
আমি আলতো করে জড়িয়ে ধরে রাখলাম। বললাম,
‛তখন আমার বাকি থাকা অর্ধেক প্রেম ফিরিয়ে দিও!’
চিত্রা আমার বুকে নাক ঘষতে ঘষতে বলে,
‛দিবো মিহির। যতো প্রেম চাও দিবো।’
আমার মনে হলো, চিত্রা এভাবেই মিশে থাকুক আমার বুকে। জীবন থেমে গেলে যাক। সমস্ত পৃথিবী থেমে যাক। মহাপ্রলয় আসলে আসুক। ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়ে যাক। তবুও ছাড়বো না; চিত্রাকে এভাবে গভীর মমতায় জড়িয়ে রাখবো চিরকাল!
হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় দুপুর। ভর্তি করাতে ঝামেলা হয়নি তেমন। ওয়ার্ডে গিয়ে সিট পাওয়া নিয়েই ঝামেলা যা হওয়ার হয়। তবুও সবকিছু ঠিকঠাক করেছি আস্তে আস্তে। ওয়ার্ডের বাইরে আমার অনেক সংগ্রাম ছিলো। চিত্রাকে কিছুই বুঝতে দেই নি কখনো। বাকি সময়টুকুও আমি সামলে নিবো। যত কষ্ট করা লাগে আমি করবো। নিজের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি চিত্রাকে গভীর যত্নে আগলে রাখবো।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন